বছরের জুন, জুলাই ও আগস্টে বৃষ্টির কারণে নির্মল বায়ুর দেখা মেলে ঢাকাবাসীর। তবে গত বছরের একই সময় এবং এ বছর জুনে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ছিল শীর্ষে। রাজধানীতে দিনদিন দূষণের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে এর দীর্ঘ প্রভাব রাজধানীবাসীকে বয়ে বেড়াতে হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। পরিবেশবিদ ড. কামরুজ্জামান বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ বছরজুড়ে দূষিত বায়ু সেবন করে থাকে। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ে ইকোসিস্টেমে। শুধু জুন, জুলাই ও আগস্টে বায়ুর প্রবাহ এবং বৃষ্টির কারণে সহনীয় পর্যায়ে থাকে বায়ু। তবে এখন দেখা যাচ্ছে এ সময়েও বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত যে মানমাত্রা রয়েছে তার চেয়েও ৫ থেকে ৮ গুণ বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে এখানে। কখনো কখনো তা ১০ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বাতাস দূষিত হওয়ার পেছনে রয়েছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নির্মাণকাজে অনিয়ম, শিল্পকারখানার বর্জ্য, বর্জ্য পোড়ানো এবং গৃহস্থালির কাজে সৃষ্ট দূষিত হাওয়া ইত্যাদি। এসব কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সালফার-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো গ্যাস তৈরি হয়। বায়ুদূষণ জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমাদের এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মানতে হবে। হাই কোর্ট ২০১৮ থেকে ২০২১ সালে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফিটসেনবিহীন যানবাহন রাস্তায় নামতে দেওয়া যাবে না এবং নির্মাণকাজে যথাযথ নিয়ম মানতে বাধ্য করা, ২৫ বছরের বেশি হয়ে গেলে যানবাহন ডাম্পিং করে ফেলা, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা, ইটভাটার পরিবর্তে ব্লক ইট তৈরি করা ইত্যাদি। তবে এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সুস্থ ভবিষ্যতের লক্ষ্যে জিরো টলারেন্স উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে অনেকাংশে দূষণ কমে আসবে। বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে সারা বছর শীর্ষ পর্যায়ে থাকে রাজধানী ঢাকা। বাতাসের মান সূচকে এ শহরের বায়ুর স্কোর তিন ক্যাটাগরিতে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’, ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচিত। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এদিকে বর্ষা মৌসুমেও যদি বায়ুদূষণ তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে সবার প্রতিদিন মাস্ক ব্যবহার করা উচিত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের মেডিকেল অফিসার ডা. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘১০ বছরের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভ্রƒণের বিকাশ ও কৈশোরকালীন বুদ্ধিমত্তা থেকে বার্ধক্যকালীন মানসিক স্বাস্থ্য মানবজীবনের প্রতিটি ধাপে বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি আমাদের বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া যাদের হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের আগে থেকেই উচিত বাইরে বের হওয়ার সময় সচেতন থাকা।’ সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ভয়ানক ধুলা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
বায়ুদূষণে নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ধুলা দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরের রাস্তাগুলোয় নিয়মিত পানি ছিটানো এবং শহরে অযোগ্য মোটরযানের চলাচল বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন আইকিউএয়ার বিশেষজ্ঞরা।