দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত না হওয়া, আগের বছর খুবই অল্প ডিম পাওয়া, পরপর দুইবার নমুনা ডিম দেওয়ার পর হালদা নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢলের পর গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড ১৪ হাজার কেজি ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ। রেকর্ড ডিম ছাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, হালদার বিভিন্ন অংশে ৩৯ জন পাহারা দেওয়ায় অতীতের তুলনায় মা মাছ শিকার কমেছে। এ ছাড়া যথাসময়ে রাবার ড্যামের পানি থাকা, সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণেই মূলত রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছাড়ে মা মাছ। হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে হালদায় রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া যায়।
২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। গত বছর ডিম পাওয়া যায় মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি।
হালদা প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ প্রজাতির মা মাছ সুরক্ষায় মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে দফায় দফায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌ-পুলিশের নিয়মিত অভিযানের কারণে মা মাছ সুরক্ষা পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, মা মাছের ডিম ছাড়ার সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল, অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারসহ অনেক কারণ জড়িয়ে থাকে। এবার শঙ্কা সত্ত্বেও ১৪ হাজার কেজি ডিম পেয়ে মৎস্যজীবীরা খুশি। এর পেছনে মা মাছ বাঁচাতে নেওয়া পদক্ষেপ, বৃষ্টিপাত-পাহাড়ি ঢলসহ বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করা গেছে।
ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম বলেন, প্রাকৃতিক কারণ যেমন আছে, তেমনই সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রত্যাশিত ডিম পাওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।