চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ঝাউতলা বস্তির বাসিন্দা কামাল উদ্দিন। পেশায় সিএনজি চালক পিতা দুই পুত্রকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন নগরীর নিউমার্কেট এলাকায়। পার্শ্ববর্তী হকার মার্কেটের মুখে কথা হয় তার সাথে। ততোক্ষণে দুই ছেলের জন্য শার্ট কেনা শেষ করেছেন। কিন্তু সাত বছর বয়সী বড় ছেলে মাহিন জিন্স প্যান্ট কিনতে নাছোড়বান্দা। তাকে নিয়ে ঢুকছিলেন হকার মার্কেটের দিকে।
আলাপকালে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের বড় হচ্ছে। বায়না ধরছে জিন্স প্যান্ট ছাড়া হবে না। অন্য কোনো প্যান্ট কিনবে না। কিন্তু নিউ মার্কেটে জিন্সের দাম বেশি। ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখেছি। সে পছন্দ করছে না। তাই হকারের দিকে যাচ্ছি। সেখানে দাম কিছুটা কম হতে পারে। ছোট ছেলে আবার জুতাও কিনতে চায়। দেখি কী করতে পারি।’
ঈদ বাজারে এক শ্রেণির ক্রেতা যেমন শপিংয়ের জন্য লাখ টাকার বাজেট নিয়ে কেনাকাটা করছেন তেমনি কামালের মতো অসংখ্য পিতা মাতা সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মুখে একফোঁটা হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছেন নূন্যতম খরচে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের বাজারগুলোতে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। যেখানে কেবল নিম্নবিত্ত নয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতার সংখ্যাও অনেক।
সরেজমিনে নগরীর আগ্রাবাদ, রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখন ক্রেতায় ভরপুর। বিক্রেতারা দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। চলছে দর কষাকষি। তবে বাড়তি তাপমাত্রার কারণে দুপুরের দিকে বেচাকেনা কম। সন্ধ্যার পরেই মূলত ক্রেতা সমাগম বেশি। অনেকে আবার ভিড় এড়াতে ইফতারের আগে মার্কেটে চলে যাচ্ছেন। সেখানে ইফতার সেরে শুরু করছেন কেনাকাটা।
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় লাকি প্লাজার বিপরীত পার্শ্বের ফুটপাতে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী এক নারীর সাথে। পরিচয় প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘কেনাকাটা প্রায় শেষ। ঈদে বাড়ি যাবো। বাড়িতে কিছু স্বজন আছেন, যারা সারা বছর ধরে নানা কাজে সাহায্য করেন। তাদের কিছু ছোটখাটো কিছু উপহার দিতে মন চায়। তাদেরও অধিকার আছে। কিন্তু নিজের পরিবারের কেনাকাটা শেষে বাজেটে কুলাতে পারিনা। তাই চেষ্টা করছি এখান থেকে কিছু নিতে পারি কিনা।’
বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী, আমবাগান, টাইগারপাস, বাংলাবাজার, রউফাবাদ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০টি বস্তি এলাকায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের বাস। এসব এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিক, রিকশা ও সিএনজি চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। এসব মানুষের ঈদের কেনাকাটায় একমাত্র ভরসা নগরীর ডজনখানেক ফুটপাতের বাজার। আবার এসব বস্তি এলাকাগুলোকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায়ও স্থানীয়ভাবে ঈদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ফুটপাতের ঈদ বাজারে কিছু দোকান আবার মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরানার তরুণদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে যেসব দোকানে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার বিভিন্ন পণ্য ও দেশী বিদেশী জুতা পাওয়া যায়। তেমনই চট্টগ্রামের জনপ্রিয় জুতার বাজার আগ্রাবাদের ব্যাংকপাড়া। ওই এলাকায় দুই শতাধিক জুতার দোকান রয়েছে। তবে সেখানকার বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিবারের তুলনায় এবার বেচাকেনা কম।
আকবর হোসেন নামের তেমনই এক বিক্রেতার বলছিলেন, তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে রপ্তানিমুখী কারখানা থেকে কিছু জুতা সংগ্রহ করেন। যেগুলো তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে এবার ঈদ ঘনিয়ে আসলেও বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। তবে তার দোকানে বছরজুড়েই নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা আছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে ভ্যানে নির্মিত অস্থায়ী দোকানে আতর, টুপি, চুড়ি, বিভিন্ন ধরণের কসমেটিক পণ্যেরও বেচাকেনা চলছে দেদারছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক ক্রেতারা জামা জুতো কেনা শেষে একবার ঢুঁ মারছেন এসব দোকানে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল