শিক্ষা মানেই শুধু পরীক্ষা, ক্লাস আর নিরন্তর পাঠচর্চা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থ জীবনযাপনের চর্চা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নির্মাণাধীন লেক সেই চর্চাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবুজ ক্যাম্পাসের ফুডকোর্ট সংলগ্ন গড়ে ওঠা এই জলাধার ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ক্লান্ত মনে প্রশান্তিরর আশ্রয় হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীরা যেমন মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পায়, তেমনি তাদের সৃজনশীলতাও বিকশিত হয়। এই লেকটি শুধু ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে না, বরং শিক্ষার্থীদের অবসর কাটানোর একটি নির্মল ও নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিগণিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা ও মনোরম পরিবেশে পড়াশোনার সুবিধার্থে এই লেক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি এখনো নির্মাণাধীন অবস্থায় থাকলেও বৃষ্টির দিনে লেকটি এক অপূর্ব দৃশ্যপটে রূপ নেয়, যা ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর মন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতির সান্নিধ্য শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। এমনকি প্রতিযোগিতামূলক ও চাপযুক্ত শিক্ষাজীবনে এমন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা যায়, লেকটি এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশবান্ধব একটি স্থাপনাও হবে। থাকবে হাঁটার পথ, বসার জায়গা, পর্যাপ্ত সবুজ গাছপালা এবং রাত্রিকালীন আলোকসজ্জা।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনেক নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায়, শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। শাবিপ্রবির এই লেক প্রকল্প সেই ধারা অনুসরণেই এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের হাঁটাহাঁটি, পাঠচর্চা, আড্ডা বা ছোট সাংস্কৃতিক আয়োজনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে ফুলের বাগান বা অন্য সব নান্দনিক কাজের চাইতে স্বচ্ছ পানির লেক অন্যরকম একটা তৃপ্তি দেয়। লেকের চারপাশে বৃক্ষরোপণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং লেকের পানির গুণগত মান বজায় রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ক্যাম্পাসে চিত্তবিনোদনের অংশ হিসেবে লেক তৈরি করা হয়। তাই আমরাও চাচ্ছি আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন সারাদিন ক্লাস পরীক্ষার ফাঁকে একটু মানসিক প্রশান্তি নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু লেক তৈরি করলেই হবেনা, এটির পরিবেশ ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। লেকের স্বচ্ছ পানির পরিবেশ বজায় রাখতে ময়লা আবর্জনা কিংবা পলিথিন জাতীয় দ্রব্য লেকে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সাত মাসে অবকাঠামোগত উন্নয়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। ইতোমধ্যে ১০০০ আসন বিশিষ্ট ১০ তলা দুটি হল, ১০ তলা বিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক ভবন ও দুটি অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যাকাডেমিক ভবন, ৪তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্র হল মসজিদ, ১১ তলা বিশিষ্ট একটি শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার, দুই তলা বিশিষ্ট একটি সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ, এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে দুটি স্প্যান ব্রিজ ও একটি পাওয়ার স্টেশনের কাজ শুরু হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ