ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম করে পদ হারানো সাবেক বিভাগীয় প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলমের পৃষ্ঠপোষকতায় জাপান সফরে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক মামুন বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন। অধ্যাপক মামুনের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও পোস্ট করে তিনি জাপান অবস্থান করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীরকে সফরসঙ্গী করে, তারই পৃষ্ঠপোষকতায় জাপানে গিয়েছেন প্রো-ভিসি।
জানা গেছে, মো. জাহাঙ্গীরের পিএইচডি গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাইসাই ওজামা। সামাজিক মাধ্যমে ঢাবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক মামুনের শেয়ার করা পোস্টেও দেখা যায় কবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে। যার মাধ্যমে তিনি জাপানের একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন।
জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর কোর্স ‘প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন জাপানিজ স্টাডিজে (পিএমজেএস)’ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ভর্তির সুযোগ পান ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী। সম্প্রতি বিভাগটির চেয়ারম্যান এবং ভর্তি কমিটির প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এর মধ্যে কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে উপাচার্য বরাবর প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মে জড়িত একজন শিক্ষকের পৃষ্ঠপোষকতায় জাপান সফর করায় ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রো-ভিসি মামুন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। তা না করে অভিযুক্ত শিক্ষকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রো ভিসি স্যার জাপান গেলেন। তা আমাদের অবাকই করেনি, সুষ্ঠু বিচার হবে বলেও মনে হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টনক নড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগের সাবেক প্রধান একের পর এক অনিয়ম করছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বিভাগে ক্লাস পরীক্ষাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন শুনছি তিনি প্রো ভিসি স্যারকে নিয়ে জাপান ভ্রমণে গেছেন, যা শুনে মর্মাহত হওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। তাহলে আমরা তো মনে করতেই পারি প্রো-ভিসি স্যারের প্রশ্রয়ে অপরাধ করেও জাহাঙ্গীর স্যার পার পেয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে কয়েকবার হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের সূত্রপাত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের কথা থেকে। এ ঘটনার পর অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগ ও তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রথমে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১১টার দিকে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এলে কিছু সময় পর ঢাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলে।