ইদানীংকালে যে কোনো সিরিজের ট্রফি উন্মোচিত হয়েছে আহসান মঞ্জিল কিংবা সিলেটের চা বাগানে। এবার হঠাৎ বিপরীত ধারায় সোনারগাঁও হোটেলের লবিতে টি-২০ সিরিজের ট্রফি উন্মোচন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস ও পাকিস্তানের সালমান আলি আগা। আন্তরিকতায় পূর্ণ পরিবেশে দুজনে ট্রফি উন্মোচন করলেও মাঠের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন শতভাগ। বিকালে মিরপুরের অনুশীলনে দেখা গেল লিটনের নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা ভীষণ উদ্দীপ্ত। প্রস্তুত পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন কিছু করার। ফ্লাড লাইটে খেলা। সেজন্য সন্ধ্যায় অনুশীলন করেন টাইগাররা। অনুশীলনে নামার আগে কাভার সরিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে উইকেট বোঝার চেষ্টা করেন টাইগার অধিনায়ক। উইকেট পরিচিত হলেও এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভালো খেলাটা কঠিন। গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে তেমনই বলেছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন, ‘মিরপুরের উইকেটে ব্যাটার হিসেবে অনেক প্লেয়ারেরই ক্যারিয়ার ডাউন হয়ে গেছে। যদি বোলার হতাম, হয়তো বা আমার ক্যারিয়ার একটু উন্নতি হতো এ উইকেটে খেলে। অবশ্যই বাংলাদেশ দল ওখানে উন্নতি করেছে, সিরিজ জিতেছে, এটা একটা বিশাল প্লাস পয়েন্ট।’
মিরপুরের উইকেটে বল বরাবরই বল নিচু হয়ে আসে। ব্যাটিং করাটা কঠিন। উইকেটের আচরণের পুরোপুরি সুবিধা নিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। ওই সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সে বছরই আরব আমিরাতে টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। অসিদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর উইকেটের সমালোচনা করেছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। টাইগার সাবেক অধিনায়ক তখন বলেছিলেন, মিরপুরে কোনো ব্যাটার ১০-১৫টি ম্যাচ খেললে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। হয়তো গতকাল উইকেট দেখে টাইগার অধিনায়কের তেমনই মনে হয়েছে!
মিরপুরে সর্বশেষ টি-২০ ম্যাচ হয়েছিল গত বছরের মে মাসে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল ৮ উইকেটে। দীর্ঘদিন পর মিরপুরে টি-২০ ম্যাচ খেলবেন লিটনরা। অবশ্য এ মাঠে বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ খেলেছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে লিটন বাহিনী। সালমান আগার পাকিস্তানের বিপক্ষে লিটনরা খেলবেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। মাত্র কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ম্যাচ হেরেও সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসে ভীষণ ফুরফুরে মেজাজে টাইগাররা। অনুশীলনে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল তাদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেন টাইগার অধিনায়ক লিটন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটা মোটেও সহজ হবে না। তাদের দলে ভালো ভালো স্পিনার রয়েছে। যাদের বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং।’ অবশ্য সাফল্য পেতে দলটির বিপক্ষে একটি দল হয়ে খেলতে হবে বলেন লিটন, ‘মিরপুরে সব সময় চ্যালেঞ্জিং হয়। একসঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলতে হয়। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই নামতে হবে।’
ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলেছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে। ওই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। দুই দল সর্বশেষ টি-২০ সিরিজ খেলে চলতি বছরের মে-জুনে। সিরিজটিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল লিটন বাহিনী। আগামী বছরের টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্ব পেয়েছেন লিটন। নেতৃত্ব পাওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হেরে যায় লিটন বাহিনী। অবশ্য তার নেতৃত্বে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছিল। তার নেতৃত্বে চতুর্থ সিরিজে লিটন বাহিনী ২-১ ব্যবধানে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করেছেন লিটন। সিরিজ সেরা হন। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘গত ১০ বছরে তো এভাবে খেলছি। হয়তো ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারছি না। অবশ্য পারফর্ম করার চেষ্টা করছি। অনুশীলনে কখনোই কোনো ঘাটতি ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না।’