দল বেঁধে দর্শকরা আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি শহর যেন উৎসবের নগরী হয়ে উঠল। কেউ গায়ে জড়িয়েছেন ইন্টার মায়ামির ১০ নম্বর জার্সি। কারও গায়ে আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর। বার্সেলোনার জার্সিও আছে। লিওনেল মেসিকে এভাবেই বুকের সঙ্গে জড়িয়ে মাঠে এলেন তারা। হার্ড রক স্টেডিয়ামকে জীবন্ত করে তুললেন ৬০ হাজারেরও বেশি সমর্থক। মায়ামির সমুদ্রসৈকতের কয়েক মাইল ভিতরের দিকে অবস্থিত স্টেডিয়াম থেকে মহাসমুদ্রের গর্জনই শোনা গেল।
ইন্টার মায়ামি বনাম আল আহলি ম্যাচ। ক্লাব ফুটবলের দৃষ্টিতে এ ম্যাচের গুরুত্ব কতটুকুই বা হতে পারে! দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে তো বটেই, পুরো ফুটবল দুনিয়ার কাছে এর গুরুত্ব খুব একটা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার খেলা এক দলের সঙ্গে আফ্রিকান এক দলের লড়াইয়ে কেনই বা আগ্রহ থাকবে! ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা আকর্ষণীয় করে তুললেন কেবল লিওনেল মেসি। তার উপস্থিতিই ছিল প্রধান আকর্ষণ। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকার কিছু ঝলক দেখার আশাতেই মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামের বিশাল গ্যালারি পূর্ণ করে দেন দর্শকরা। কেবল এ একটা ম্যাচই নয়, পুরো ক্লাব বিশ্বকাপেই লিওনেল মেসি প্রধান আকর্ষণ। এর প্রমাণ, মেসিদের ম্যাচের বাইরে ফিফা খুব কম টিকিটই বিক্রি করতে পেরেছে। আমেরিকান পত্রিকাগুলো বলছে, ৩৪৯ ডলারের টিকিট ৮০ ডলারে নামিয়েও বিক্রি বাড়াতে পারছে না ফিফা। অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শেষ মুহূর্তে টিকিট ফ্রিতে দিয়ে হলেও দর্শক মাঠে আনতে পারে ফিফা।
ক্লাব বিশ্বকাপ এতদিন হতো ছয়টি কনফেডারেশনের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে। এটা অনেকটা শৌখিন টুর্নামেন্টই ছিল। প্রথমবারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ফিফা। লিওনেল মেসিও দিন কয়েক আগে বলেছেন, যে দলগুলোতে বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা খেলে তাদের নিয়ে একটা বিশ্বকাপ হওয়াই উচিত। কিন্তু এ বিশ্বকাপ নিয়ে ফুটবলার এবং সমর্থকদের মধ্যে আগ্রহ নেই তেমন। এর কারণ, ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুম মাত্রই শেষ হয়েছে। ফুটবলাররা এ সময়টাতে ছুটি কাটাতে যান। আর দলের কিছু সদস্য নিয়ে ক্লাবগুলো প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি চালিয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যায় দল বেঁধে। সেই সময়টাতে তাদের খেলতে হচ্ছে সর্বোচ্চ লেভেলের ম্যাচ।
অবশ্য এতকিছুর পরও ক্লাব বিশ্বকাপ বেশ জমিয়ে তুলেছে ফিফা। অন্তত প্রথম ম্যাচে ৬০ হাজারের বেশি সমর্থকের উপস্থিতি তাই প্রমাণ করে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও আগামী বছরের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা সেরে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে প্রথম ম্যাচে দর্শকদের মন ভরাতে পারেনি লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, সার্জিও বুসকেটদের ইন্টার মায়ামি। মিসরের ক্লাব আল আহলির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে দলটি। এতে বিপদ বেড়েছে মেসিদের। পরের ম্যাচে ইউরোপের শক্তিশালী দল পোর্তোর মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি। গ্রুপ পর্বের বাধা পাড়ি দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে ক্লাব বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের। এরপর ইন্টার মায়ামিকে খেলতে হবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরার সঙ্গেও। লাতিন আমেরিকান ফুটবলের অন্যতম সেরা এ দলের বিপক্ষেও কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে মেসিদের জন্য।