জীবজগতের এক বিস্ময়কর ঘটনা হলো সামাজিক মোনোগ্যামি বা এক সঙ্গীর প্রতি দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন। তবে বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ প্রাণীই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে না। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো জানাচ্ছে, এই বিবাহ বিচ্ছেদ শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিদের মধ্যেও ঘটছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে অস্ট্রিয়ার একটি চিড়িয়াখানায় ১১৫ বছরের পুরোনো গালাপাগোস কচ্ছপ দম্পতি বিবি এবং পোলডির বিচ্ছেদ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। প্রায় এক শতাব্দী একসঙ্গে থাকার পর বিবি হঠাৎ পোলডিকে আক্রমণ করে এবং তাদের আলাদা করতে হয়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের পুনর্মিলন সম্ভব হয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সামাজিক মোনোগ্যামি খুবই বিরল, মাত্র ১০% প্রজাতির মধ্যে এটি দেখা যায়। কারণ, বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রজাতিতে মাতৃদুগ্ধ ও গর্ভধারণের মতো দায়িত্ব মূলত মায়ের ওপর নির্ভরশীল। ফলে পিতার ভূমিকা সীমিত হয়ে যায়। বিপরীতে পাখিদের মধ্যে সামাজিক মোনোগ্যামি তুলনামূলক বেশি। কারণ, পিতারাও খাবার জোগানো এবং বাচ্চাদের দেখাশোনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
তবে পাখিরাও সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত নয়। জেনেটিক পরীক্ষার পর দেখা গেছে, অনেক পাখির বাচ্চা আসলে অন্য পুরুষ পাখিদের সঙ্গে সঙ্গমের ফলে জন্মেছে (একসঙ্গে বসবাসকারী পুরুষ পাখির বাচ্চা নয়)। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাগপাই পাখির ক্ষেত্রে এই হার ৮২% পর্যন্ত।
জলবায়ু পরিবর্তনও পশু-পাখিদের বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে ভূমিকা রাখছে। অ্যান্টার্কটিকার স্নো পেট্রেল পাখির ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি তুষারপাতের ফলে বাসা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ডিম নষ্ট হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি সঙ্গীদের মধ্যে ঝগড়া ও বিচ্ছেদের হার বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ব্ল্যাক-ব্রাউড আলবাট্রস পাখির মধ্যে উষ্ণ পানির তাপমাত্রার কারণে বিচ্ছেদের হার বেড়েছে। গবেষকরা এটিকে ‘পরিবেশগত বিবাহ বিচ্ছেদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লম্বা আয়ুষ্কালের পাখি, যেমন ওয়ান্ডারিং আলবাট্রস, সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম। কারণ, এরা একসঙ্গে বাচ্চা লালন-পালনে দক্ষতা অর্জন করে। অন্যদিকে, স্বল্প আয়ুষ্কালের প্রাণীরা সঙ্গী বদলে প্রজনন সম্ভাবনা বাড়াতে চায়।
জীবজগতের এই বিচিত্র সম্পর্কের টানাপোড়েন শুধু প্রজনন নয়, পরিবেশ এবং সামাজিক আচরণের ওপরও প্রভাব ফেলে। পরিবেশগত পরিবর্তন এবং জলবায়ু সংকট ভবিষ্যতে এই সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি আরও বদলে দেবে বলে গবেষকরা মনে করছেন। সূত্র : গার্ডিয়ান
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল