রানার ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে... রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা রানার কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততার দিকটি তুলে ধরেছেন। রানার মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদবাহক। পিঠে খবরের বোঝা, মানি অর্ডার নিয়ে রাতের অন্ধকারে লণ্ঠন জ্বালিয়ে, ঝুমঝুম্ ঘণ্টা বাজিয়ে ছুটে চলে রানার। মানুষের আস্থায় থাকা ডাক বিভাগ ডিজিটাল যুগে সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। তারা পায়ে হেঁটে নয়, চলেন গাড়িতে ডাকের বস্তা নিয়ে। বগুড়ার ২২০টি ডাকঘরের কোথাও আছে অফিস আবার কোথায় নেই। বাসা-বাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে রানারদের জীবনের চাকা। চিঠির স্থান দখল করে নিয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি, ফেসবুক কিংবা টেলিগ্রাম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইমেইল, এসএমএস ও নানা মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হওয়ায় সেদিকেই ঝুঁকছে মানুষ। বগুড়া ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ২২০টি ডাকঘর রয়েছে। এরমধ্যে বিভাগীয় ২০টি ও অবিভাগীয় ২০০টি। এ ছাড়া কার্যক্রমের জন্য নিজস্ব ভবন আছে ৪৩টি। ২৫টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় অস্থায়ী অবস্থায় কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। ৫০টি ইডি পোস্টমাস্টারের বাস ভবনে, ৫৩টির কার্যক্রম চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন নিজস্ব কক্ষে, ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে ও ১৫টি অন্যান্য সরকারি অফিস ভবনে ডাকঘরের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলার সোনাতলা উপজেলার ভেলুরপাড়া রেলস্টেশন, হুয়াকুয়া বাজার, কাহালুর তিনদীঘি, সারিয়াকান্দির মথুরাপুর, গাবতলীর বাইগুনি ও হাতিবান্ধা, ধুনটের জোড়াশিমুল, দুপচাঁচিয়ার চৌমুহনী এবং করমজিতে ইডির বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকঘরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জানা যায়, একসময় এই ডাক বিভাগের মাধ্যমে মানুষ প্রিয়জনের খোঁজ নিত। হলুদ রঙের পোস্টকার্ডে কিংবা সাদা কাগজে কালো অক্ষরে চিঠি লিখে হলুদ খামে ভরে লাল ডাকবাক্সে ফেলে পাঠানো হতো প্রিয়জনদের কাছে। ভিন্ন ধরনের অনুভূতি আর অনাবিল আনন্দে ভরপুর ছিল মায়াবী হাতের লেখা সেই চিঠিতে। প্রিয়জন থাকলেও এখন আর ডাকের মাধ্যমে দাওয়াত কিংবা খোঁজ খবরের জন্য চিঠির প্রয়োজন হয় না। সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তির দাপটে সেসব সোনালি দিনগুলোর স্মৃতিময় দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সেই হলুদ খাম আর লাল ডাকবাক্সের ব্যবহার। বগুড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে এখনো কিছু ডাকবাক্স দেখা গেলেও সেগুলো ভাঙা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
ডাকঘর আর ডাকবাক্সের এখন আর যৌবন নেই। মরিচায় ক্ষয়ে যাওয়া লাল রঙের ডাকবাক্সে তামাটে রং ধরেছে, মরিচা ধরেছে ডাকঘরের টিনের চালা ও বেড়াতে। পোস্ট অফিসে নেই আগের মতো কোনো কার্যক্রম। অলস বসেই কাটছে সময়। বগুড়ার পোস্ট অফিস পরিদর্শ্বক (পশ্চিম) মনজুরুল ইসলাম জানান, ডাকবাক্সগুলো নিয়মিত খোলা বা দেখাশোনা করা হয়। উপজেলা পোস্টঅফিস, শাখা অফিসে ডাকবাক্স রয়েছে। তবে এসব ডাকবাক্সে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র কম পাওয়া যায়। যেসব চিঠি পাওয়া যায় তার সবই সরকারি অফিসের। বগুড়ার ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের অধীনে শহরে আটটি শাখা ডাকঘর রয়েছে। এগুলোতে একজন সাব পোস্টমাস্টার, একজন অপারেটর, একজন পেকার ও একজন পিয়ন নিয়মিত কাজ করছেন। রানার পায়ে হেঁটে এখন আর ডাকের বস্তা বহন করেন না। তারা গাড়িতে নিয়মিত ডাক পৌঁছে দিচ্ছেন। পিয়নরা ডাকমহরে সিল দেওয়া, গালা করা ও প্যাকিং করার কাজ করেন।’