লাইব্রেরি জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। পাঠকরা কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটিকে সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি করেছেন। লাইব্রেরিটির ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯১০ সালে ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ ক্ষমতায় আসেন। এ উপলক্ষে রাজকোষ থেকে আমোদ-প্রমোদের জন্য উপনিবেশগুলোয় অর্থ পাঠানো হয়। তা দিয়ে গোপালগঞ্জের নাট্যমোদী আইনজীবীরা করোনেশন থিয়েটার ক্লাব নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯২০ সালে থিয়েটার ক্লাবের প্রয়োজন ও স্থানীয়দের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে করোনেশন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম দিকে লাইব্রেরিতে ছিল কিছু উপন্যাস, নাটকের স্ক্রিপ্ট, দৈনিক, সাপ্তাহিক ও কিছু মাসিক পত্রিকা। পাঠকের চাহিদার কারণে বাড়তে থাকে লাইব্রেরির পরিসর। বর্তমানে লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌসি রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ অসংখ্য বই।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছগাছালি। ছায়াঘেরা এ লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। ফলে লাইব্রেরিটি প্রতিদিন খোলা হয় না। দেখভাল করা হয় না। দীর্ঘ বছর ধরে রয়েছে বন্ধ। এ কারণে ছয় বছর ধরে লাইব্রেরিতে নেই কোনো লাইব্রেরিয়ান। নতুন নতুন বই সংগ্রহে ভাটা। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। জানালা ভেঙে অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত লাইব্রেরিটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ফলে এ লাইব্রেরির বইয়ের সঙ্গে পাঠকদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি। পাঠক সজীব বিশ্বাস বলেন, নজরুল পাবলিক লাইব্রেরিটি শতবর্ষ পার করেছে। প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞান চর্চার জন্য এই লাইব্রেরিতে আসতাম। কিন্তু এই লাইব্রেরির অনেক বই-ই পড়েছি। নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। এখানে ছয় বছর ধরে লাইব্রেরিয়ান নেই। তাই লাইব্রেরিটি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে আর এখানে আসা হয় না। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এখানে বেশ কিছু দুষ্প্র্রাপ্য বই রয়েছে। আমরা বই আর্কাইভের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালা ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এই লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এখানে এসে জ্ঞানচর্চা ও বই পড়তে পারবেন।