শান্তির খোঁজে শহরের বাড়ি বিক্রি করে চলে এলেন গ্রামে। মাঠের মধ্যে একাকী বসবাস করছেন শাহিন। শুধু কৃষিকাজ নয়, নানান রকম যন্ত্র উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁর একাকী জীবন ও আবিষ্কার দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। ঝিনাইদহ পৌরসভার আরাপপুর উকিলপাড়ার আবু জাফর বিশাসের ছেলে আহসান ইসলাম শাহিন। তিনি শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর সরকারি কে সি কলেজে ভর্তি হন। ভর্তির পর কলেজে না গিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে ইলেকট্রিকের ওপর দুই বছরের কোর্স করেন। ঢাকা থেকে ফিরে এসে আরাপপুর উকিল পাড়ায় বাড়িসহ চার শতক জমি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর ১৩ লাখ টাকায় ৪৩ শতক জমি ক্রয়
করেন সদর উপজেলার জাড় গ্রামের মাঠের মধ্যে। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে প্রশান্তি পেতে নবগঙ্গা নদীর ধারে মনোরম পরিবেশে একাকী বসবাস করছেন তিনি। সেই জমির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করেন। নিজেই ঘরের ডিজাইন করেছেন। ঘরের সামনে ফুলের বাগান আর চারপাশে বিভিন্ন রকমের সবজি ও ফলের গাছ রোপণ করেছেন। সাবমার্সিবল টিউবওয়েল স্থাপন করে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ দ্বারা জমির বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির মতো পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। সার কীটনাশক বাদে প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন রকম চাষাবাদ করছেন। নিজের হাতে উৎপাদিত সবজি ও চাল নিজেই রান্না করে চলছে তাঁর দিন। সোলার প্লান্ট ও আধুনিক উপায়ে খড়ি দিয়ে রান্নার জন্য তিনি নিজেই তৈরি করেছেন চুলা।
চুলায় ভাত, সবজি, মাছ, মাংস রান্না করার জন্য কতটুকু তাপমাত্রা দরকার সেটিও মাপার জন্য তিনি তৈরি করেছেন ইলেকট্রিক মিটার। গরমের সময় পানি ঠান্ডা রাখার জন্য আধুনিক পানির ট্যাংকি তৈরি করেছেন। এক কথায় বলা যায় তার উদ্ভাবনের শেষ নেই। এ ছাড়া রাতে ধান ও সবজি খেতের পোকা-মাকড় ধরার জন্য আবিষ্কার করেছেন ইলেকট্রিক মেশিন। সেই পোকা ধরে দেশি ও পোলট্রি মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই পোকা খেয়ে দ্রুত মুরগির বাচ্চাগুলো বেড়ে উঠছে। মুরগির খাবার জোগানোর পাশাপাশি সবজি ও ধানখেত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। বর্তমানে শাহিনের জীবনসঙ্গী হিসেবে রয়েছে চারটি বিড়াল ও একটি কুকুর। এ ব্যাপারে কৃষক আহসান ইসলাম শাহিন জানান, ঘরসংসারের মধ্যে ডুবে না থেকে মানুষকে কিছু একটা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনীতে আনন্দ পান তিনি।