রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ছিন্নপত্রে’ চিঠির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে অনেক মহামূল্য উপহার আছে, তার মধ্যে সামান্য চিঠিখানি কম জিনিস নয়।’ আর সেই চিঠিখানি যদি হয় মহান ব্যক্তির তাহলে তো কথাই নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চিঠি দিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের অজপাড়াগাঁয়ের গিয়াস উদ্দিনকে। গিয়াস উদ্দিন সেই চিঠিটি ৪৬ বছর ধরে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বর্শিকুড়া গ্রামের জুবেদ আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৭৭)। পেশায় অটোরিকশা চালক তিনি। ১৯৭৮ সালের কথা। গিয়াস উদ্দিন তখন ভিডিপির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে সময় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সফরে আসেন হোসেনপুরে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাঁর। পরে ১৯৭৯ সালে হঠাৎ এক দিন একটি চিঠি আসে গিয়াস উদ্দিনের ঠিকানায়। চিঠি খুলে অবাক তিনি। অন্য কারও চিঠি নয়, চিঠি দিয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সময় গড়িয়ে অনেক ঝড়ঝাপটাও গেছে গিয়াস উদ্দিনের জীবনে। কিন্তু সেই চিঠি হাতছাড়া করেননি। গিয়াস উদ্দিনের ভাতিজা আবদুস সালাম বলেন, চাচার কাছে দেওয়া প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চিঠির কারণে তাদের পরিবার গর্বিত।’ প্রতিবেশী নবী হোসেন ও ফিরোজ মিয়া জানান, অভাব-অনটনের সংসার গিয়াস উদ্দিনের। এক সময় পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। রাজনৈতিক কারণে কেউ কেউ তাঁর দোকান থেকে পিঠা কিনত না। একপর্যায়ে পিঠা বিক্রি ছেড়ে দিয়ে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন বলেন, গিয়াস উদ্দিনের মতো মানুষকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।
চিঠিতে কী লিখেছিলেন জিয়া : ভিডিপির লিডার হিসেবে ১৯৭৯ সালের ১৪ জুলাই গিয়াস উদ্দিনকে চিঠিটি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। চিঠির শুরুতে তিনি সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি লিখেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের বর্তমান অধ্যায়ে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। বিগত দুই বছর ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। আপনাদের সময়োচিত কর্মতৎপরতায় ও দেশপ্রেমিক জনগণের সহযোগিতায় আমরা বহুলাংশে অরাজকতার অবসান ঘটাতে পেরেছি। বর্তমানে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এ সুযোগে গণবিরোধী অশুভ শক্তি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে আমাদের গণতান্ত্রিক জীবনধারা ব্যাহত করতে পারে।
যাদের কাছে বেআইনি অস্ত্র/হাতিয়ার আছে, তাদের চিহ্নিত করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। অতীতের চেয়ে আপনাদের আজ আরও বেশি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে দেশ ও জনগণের সুখ-শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয় এবং জনগণ শান্তিতে বাস করতে পারে। আপনাদের দেশের শান্তির জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে। আল্লাহ পাক আপনাদের সহায় হোন।’