অ্যান্টার্কটিকায় ঠান্ডা রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে পেঙ্গুইনের মল। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেঙ্গুইন ও অন্যান্য সামুদ্রিক পাখির মলে থাকা অ্যামোনিয়া বাতাসে মেঘ তৈরিতে সাহায্য করছে, যা স্থানীয় তাপমাত্রা কমিয়ে বরফ গলন রোধে ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বখ্যাত সাময়িকী কমিউনিকেশন্স আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রের ফাইটোপ্লাংকটন (সূর্যালোকনির্ভর একধরনের ক্ষুদ্র জীব) যখন সালফারযুক্ত গ্যাস ছাড়ে, তখন পেঙ্গুইনের মলের অ্যামোনিয়ার সঙ্গে এই গ্যাস প্রতিক্রিয়া করে বাতাসে অ্যারোসল (ছোট কণিকা) তৈরি করে। এই কণিকাগুলো জলীয় বাষ্প জমে মেঘে পরিণত হতে সহায়ক হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক ও হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক ম্যাথিউ বয়ার বলেন, পেঙ্গুইনেরা বায়ুমণ্ডলে কণিকা তৈরির ক্ষেত্রে একপ্রকার সম্মিলিত প্রভাব রাখে, যা পরবর্তীতে মেঘ তৈরি করে এবং স্থানীয় আবহাওয়া ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
গবেষক দলটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকার মারাম্বিও ঘাঁটির পাশে ৬০,০০০ অ্যাডেলি পেঙ্গুইনের একটি উপনিবেশে দু’মাস ধরে বাতাসে অ্যামোনিয়ার মাত্রা পরীক্ষা করে। যখন বাতাস পেঙ্গুইনদের দিক থেকে বইতে শুরু করে, তখন বাতাসে অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব ১,০০০ গুণ বেড়ে যায়। এমনকি পেঙ্গুইনেরা চলে যাওয়ার পরও তাদের মল থেকে নির্গত অ্যামোনিয়ার মাত্রা শতগুণ বেশি থেকে যায়।
গবেষকেরা একদিনে একাধিক পরিমাপের মাধ্যমে নিশ্চিত হন, অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে অ্যারোসল কণিকার সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই কারণে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়, যা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
এই গবেষণায় আরও বলা হয়, পেঙ্গুইনের মল কেবল বরফ গলন রোধেই সহায়তা করছে না, বরং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বকেও সামনে নিয়ে আসছে। বয়ার বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, সমুদ্রের ফাইটোপ্লাংকটন ও পেঙ্গুইনের মতো জীবের মধ্যকার সম্পর্ক স্থানীয় জলবায়ুর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।’
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, অ্যান্টার্কটিকার বরফ, সমুদ্র ও জীববৈচিত্র্য পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়ার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ নামে পরিচিত থোয়াইটস হিমবাহ যদি পুরোপুরি গলে যায়, তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল