সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ার বাজারে হঠাৎ দাম বেড়েছে মোটা ও চিকন চালের। প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে বেড়েছে ৬ থকে ৭ টাকা। আবার জাতভেদে কোনো কোনো চালের কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় স্থানীয় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলার ধান সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে চাল মজুদ করছেন। যার ফলে দাম বেড়ে যায় খুচরা বাজারে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবজি ও ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা বগুড়া। বোরো মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে। আবার ফসল নষ্টও হয়নি। তারপরও বগুড়ায় হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ার বাজারে দাম বেড়েছে মোটা ও চিকন চালের। প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর খুচরা বাজারে বেড়েছে ৬ থকে ৭ টাকা। জাতভেদে কোনো কোনো চালের কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় স্থানীয় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
বুধবার বগুড়া শহরের গোদারপাড়া, ফতেহ আলী ও কলোনী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন চালের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭০ থেকে ৭২ টাকা, কাটারি ৭৫ থকে ৮০ টাকা, শুভলতা ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এবার অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ ২০২৫ মৌসুমের আওতায় সররকারি প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের সংগ্রহ মূল্য ৪৯ টাকা, প্রতি কেজি আতপ চালের মূল্য ৪৮ টাকা ও গমের মূল্য প্রতি কেজি ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছেন। এ কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা বড় বড় মিলারদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
বগুড়া শহরের প্রধান চালের আড়ত গোদারপাড়া বাজারের হৃদয় চাল ঘরের আড়তদার এম এ হামিদ জিল্লুর জানান, হঠাৎ পাইকারিতে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা চালের দাম বেড়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার (২৫ জুন) চালের দাম কিছুটা কমেছে। কাটারিভোগ ও মিনিকেট চাল পাকইকারিতে ২৫ কেজি ওজনের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা, রনজিত চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫ কেজি ওজনের বস্তা ১৩৫০ টাকা, ২৮ জাতের চাল ২৫ কেজি ওজনের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৩৮০ থেকে ১৪০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি আড়তদারদের দোষারোপ করছেন। তাদের কাছে পাইকারি চাল কেনার মোমো দেখলে বোঝা যাবে কারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। এজন্য প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন। খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ হলে চালের বাজারে অস্থিরতা কমে যাবে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত ধান-চাল সরবরাহ রয়েছে।
বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি) কর্মসূচি সচল রাখা হয়েছে। অবৈধ মজুত খুঁজে বের করতে জেলার বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোথাও অবৈধ মজুত পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া খুচরা বাজারে কেউ যদি দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যদি কোনো ব্যবসায়ী চালের অবৈধ মজুদ করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই