মধ্যরাতে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির মধ্যে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগে শঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর আগে রবিবার মধ্যরাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামের এ হামলার জবাব দিতে সোমবার কাতার এবং ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনীর অভিজাত শাখা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এ হামলার কয়েক ঘণ্টা পর মধ্যরাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ইরানসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলার মধ্যেই ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ার শেভা শহরের একটি আবাসিক ভবনে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় দুই জেনারেলসহ সাতজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল তেহরানের নিকটবর্তী কারাজ শহরে এ হামলা চালানো হয়। ইরানের রাষ্ট্রাত্ত সংবাদ সংস্থা ইরনার বরাতে ইউএনবি জানায়, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ বাহিনীটির মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। এর আগে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আবারও হামলা শুরুর নির্দেশ দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। গতকাল সকালে তিনি বলেন, ‘তেহরানের কেন্দ্রবিন্দুতে বিভিন্ন নিশানায় তীব্র হামলা চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী গিলান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রদেশের এক উপ-গভর্নরের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে ইরান। তবে ফের ইসরায়েল আগ্রাসন চালালে, চূড়ান্ত, দৃঢ় ও যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইরানের ওপর হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলার এ ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কিছুটা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল ল্যাভেল ট্রাম্পের এ মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন নিশ্চিত করতে সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর এ চুক্তিতে ইরানকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে কাতারের সহায়তা নেন তিনি। গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল, বোমা ফেলা একদম বন্ধ করুন। যদি আপনারা এটা বন্ধ না করেন, তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির গুরুতর লঙ্ঘন। এখনই, এই মুহূর্তে নিজেদের পাইলটদের ফিরিয়ে আনুন।’
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানলে ইরানও তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। ইরানের সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ এ কথা জানিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে যতক্ষণ ইসরায়েল তা মেনে চলে। তিনি আরও বলেন, ইরান সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তেহরান আলোচনার টেবিলে বসেই ইরানি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরায়েলের, ইরানের নাকচ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্তা দেওয়ার পর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি থাকার বিষয়টি জানানো হয়। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল দাবি করেছে যে, ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। অপরদিকে, ইরান এ দাবি নাকচ করেছে। এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবির অল্প সময় পর ইসরায়েলের কট্টর-ডানপন্থি নেতা, অর্থমন্ত্রী ও নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র বেজালেল স্মৎরিচ এক্সে সংক্ষিপ্ত পোস্টে বলেন, ‘তেহরান কেঁপে উঠবে’।