কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা অটোরিকশাচালক মো. সবুজ (৩০) মারা গেছেন। ভর্তির পাঁচ দিন পর গতকাল ঢাকা মেডিকেলের জাতীয় বার্ন ইউনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সবুজ। ভিকটিম চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় চুরির অপবাদ দিয়ে তার অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয়। এতে তিনি নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায় বলে জানান চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক।
জানা যায়, চান্দিনা হাসপাতাল রোডের ইউনুছ মিয়ার অটোরিকশার গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন তাদের অটোরিকশা রাখতেন। পালাক্রমে তারা তিনজন পাহারাও দিতেন। ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩টায় ওই গ্যারেজ থেকে দুটি অটোরিকশা চুরি হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করে চলতি বছরের ৪ মার্চ তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় মানিক নামে একজনকে ধরে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। থানায় মামলা থাকাবস্থায় ওই রাতে এলাকার কয়েকজন মাতাব্বর স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার কথা বলে মানিককে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। পাশাপাশি সবুজকে চোর সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সবুজের পক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কোনো সক্ষমতা না থাকায় সে ওই রায় মানেনি। রবিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন মাতাব্বরের প্ররোচনায় সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তার অটোরিকশা নিয়ে যায়। তাকে চোর বলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেয়। এ সময় সবুজ অপবাদ সহ্য করতে না পেরে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার বলেন, ‘গরিবের জন্য আইন নেই, বিচার নেই। তারা (মাতাব্বররা) চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করেছে। আমার স্বামী এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে মারা গেছে। আমার স্বামীর অটোরিকশাটিও ফিরিয়ে দেয়নি।’ এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ উল ইসলাম জানান, অটোরিকশা চুরির ঘটনায় সবুজকে দায়ী করে চাপ সৃষ্টি করলে তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শুক্রবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।