বাফুফে ভবনের মূল ফটকে তালা দেওয়া। ফুটবল সমর্থকরা টিকিট না পেয়ে সদর দরজা আটকে বসে আছেন। বাফুফের কনফারেন্স কক্ষেও বিরল দৃশ্য। সাংবাদিকে পরিপূর্ণ। বসার স্থান না পেয়ে কার্পেটেই বসে পড়লেন অনেকে। ভুটানের কোচ নাকামুরা দৃশ্যটা দেখে একগাল হাসলেন। ফুটবলে এতটা উন্মাদনা বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকেও আপ্লুত করল। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মোবাইল ক্যামেরা অন করে বিরল দৃশ্যটা ধারণ করে রাখলেন। এমন দৃশ্য খেলোয়াড়ি জীবনে কখনো দেখেননি বলেও নির্দ্বিধায় বলে দিলেন।
বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে সাফল্যের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। জয়-পরাজয়ের চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করেছে এ দেশের ফুটবল। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের নেশায় বুঁদ সমর্থকরা বাংলাদেশের ফুটবল ভুলতে বসেছিল। সাংবাদিক আর কিছু কাকপক্ষীই ছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের নিয়মিত দর্শক! এর বাইরে আবাহনী-মোহামেডানের কিছু পাগল ভক্ত। কয়েক বছর আগে বসুন্ধরা কিংস ফুটবলে মধ্যগগনের উত্তাপ নিয়ে আগমন করে। সেই থেকেই দিনবদলের শুরু। এরপর গত মার্চে এক ধাক্কায় ফুটবলকে আকাশের উচ্চতায় পৌঁছে দেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা এ তারকাকে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলতে দেখে মৌমাছির মতোই ছুটে আসেন আরও অনেকে। ইতালির ফুটবলে খেলা ফাহামিদুল এসেছেন। আজ আসছেন সামিত সোম। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল পূর্ণ হচ্ছে আজ। হামজা-ফাহামিদুলকে আজই একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। ভোরে আসবেন বলে সামিতের না খেলার সম্ভাবনা বেশি। তাই আজকের ম্যাচে হামজা ও ফাহামিদুল ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ থাকবে। অবশ্য দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানালেন কোচ। ভুটান ম্যাচের মধ্যেই তিনি কম্বিনেশনটা ঠিক করে নিতে চান। এ কারণেই হয়তো দলে বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে আজ।
হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন দুই দিন আগে। দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন আসার পর থেকেই। গতকাল ফুটবলারদের অনুশীলন সাংবাদিকদের জন্য কিছুক্ষণ উন্মুক্ত ছিল। সেখানে দেখা গেল, হামজা পুরো দলটার সঙ্গেই মিশে গেছেন। ট্রেনারের নির্দেশ মেনে ওয়ার্ম-আপ করছেন। মাঝে-মধ্যে হাস্যরসে মেতে উঠছেন সতীর্থদের সঙ্গে। হামজাদের অনুশীলন সাধারণদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ভক্তকূল জাতীয় স্টেডিয়ামের দরজায় ভিড় জমালেন। দূর থেকে এক পলক দেখলেও যেন চোখ জুড়ায়।
সমর্থকদের এমন উচ্ছ্বাস আর মিডিয়ার আলো, সবকিছুকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন কোচ কাবরেরা। এবার তিনি প্রতিদান দিতে চান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমরা জানি সবার মধ্যেই দারুণ উৎসাহ কাজ করছে। এবার আমরা তার প্রতিদান দিতে চাই।’ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি একসময় ভেবেছিলাম বাইরের ফুটবলারদের আসা বন্ধই না হয়ে যায়। তবে এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা ফুটবলার আছে আমাদের। আরও ফুটবলার আসছেন। এটা দারুণ ব্যাপার।’ বাংলাদেশের ফুটবল গন্তব্যের পথেই ছুটছে বলে মনে করেন তিনি। বহু বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলে এমন আবেগ-উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। সাবেক ফুটবলারদের আশা, এই উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে সাফল্য এনে দেবেন ফুটবলাররা।