বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে আজ থেকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’। চলবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। সামিটে দেশিবিদেশি হাজারো উদ্যোক্তা/বিনিয়োগকারী এক ছাতার নিচে মিলিত হবেন। উপস্থিত হবেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক বহুজাতিক কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরাও। বাংলাদেশে একক বিনিয়োগের পাশাপাশি একে অন্যের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাবনাও খুঁজে দেখবেন তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোন সরেজমিন পরিদর্শন করে বিনিয়োগের সুযোসুবিধা যাচাই করবেন।
বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে সামিটের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। আশিক চৌধুরী বলেন, সামিটের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগের বিভিন্ন বাধা দূর করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার পদক্ষেপগুলো প্রদর্শন করা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা। সামিটে চীনের পাওয়ার চায়না ও আমেরিকার এক্সিলারেট এনার্জির মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানও থাকবে। বিডার পক্ষ থেকে সম্মেলনে অংশ নিতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগকারীদের কী কী সুবিধা দেবে তা বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরবে। তিনি বলেন, ‘এই সামিটে স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা খুব কম। এখানে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখবেন। চার দিনের সামিটে সেমিনার বা বক্তৃতার বিষয় মাত্র এক-দেড় ঘণ্টা। বাকি পুরো সময়টা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বিনিয়োগকারীরা একে অন্যের সঙ্গে মিটিং করবেন। প্রশ্ন থাকলে সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে জানতে পারবেন। দ্বিপক্ষীয় মিটিংয়ের মাধ্যমে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হবে। আজ সামিটের প্রথম দিনেই ৬০ জনের বেশি উদ্যোক্তাকে নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে চট্টগ্রামে। সেখানে তারা কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে ন্যাশনাল ইকোনমিক জোন ভিজিট করে রাতে ফিরবেন। ইন্টারকন্টিনেন্টালে দিনব্যাপী প্ল্যানারি সেশন ও স্টার্টআপ কানেক্ট নামে প্রোগ্রাম হবে। আগামীকাল বিনিয়োগকারীদের পাঠানো হবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে। সামিটে বিশ্বব্যাংক ও আইএলওর সঙ্গে কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ৯ তারিখ হবে মূল অনুষ্ঠান। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। কিছু অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কথা শুনব। আরও নানা কর্মসূচি থাকবে। বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক এমন বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর হবে। বড় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বৈঠক করবেন। এ ছাড়া সামিটে স্টারলিংক তাদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সামিটের লাইভ প্রোগ্রামগুলো স্টারলিংকের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে। স্টারলিংকের বিডার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের এনজিএসওর লাইসেন্স দিয়ে দেব। এরপরই তারা অপারেশনে যাবে। ১০ এপ্রিল সামিটে বিভিন্ন ব্রেকআউট সেশনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ম্যাচমেকিং সেশন এবং সেরা বিনিয়োগ চর্চা নিয়ে রাউন্ড টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’ সম্মেলনে ৫০ দেশের সাড়ে পাঁচ শর বেশি বিনিয়োগকারী ও আড়াই হাজার দেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪০টি দেশ থেকে ডেলিগেটস আসার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান বিডা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের ধারণক্ষমতা ৭০০। কিছু উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রদূত বাদ দিলে বাকি পুরোটাই বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অনাবাসী বাংলাদেশি।’ সামিটের পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি, এফসিডিও, গ্রামীণফোন, বিশ্বব্যাংক ও ফিকি- যারা যৌথভাবে এফডিআই বাড়াতে সহযোগিতা করবে।