‘একজন ছাত্র হয়ে কিভাবে প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন?’ এই প্রশ্ন তুলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠকসহ তিন নেতা সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন।
রবিবার (১ জুন) রাতে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।পদত্যাগকারী তিন নেতা হলেন বরিশাল জেলার মুখ্য সমন্বয়ক হাসিবুল আলম (তুরান), যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম (আবিদ) ও সদস্য তাহসিন আহমেদ (রাতুল)।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে হাসিবুল আলম (তুরান) বলেন, কাউকে দেখেছি আপনারা প্রাডো গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কাউকে দেখেছি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে খাচ্ছেন। ভাই, একজন ছাত্র হয়ে কিভাবে প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন? দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি এসব কাজে তারা সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে কারণে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেই একই ফ্যাসিবাদ, একই বৈষম্য, একই দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, সেই একই কাজকর্ম আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখে যাচ্ছি বিধায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আজকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এতদিন আমরা যে সম্মানটুকু অর্জন করেছি সেটুকু ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
তৌহিদুল ইসলাম আবিদও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে যে কারণে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেই একই ফ্যাসিবাদ, সেই একই বৈষম্য, একই দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, সেই একই কাজকর্ম আমি বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখে যাচ্ছি বিধায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
পদত্যাগকারী নেতারা শুধু দুর্নীতির অভিযোগই করেননি, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। হাসিবুল আলম জানান, গত ১৯ মে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরিশাল আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের আয়োজিত একটি ইফতার পার্টিতে তাকে আটকানো হয় এবং তার ওপর হামলা করা হয়। এই ঘটনাটি তার কাছে খুবই অপ্রীতিকর লেগেছে এবং তিনি দাবি করেন, এই কাজটি বরিশাল জেলার বৈষম্যবিরোধী সদস্যরাই করেছে।
তিনি বলেন, পরে সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা একসঙ্গে বসে আলাপ আলোচনা করতে রাজি না। কারণ তারা জানে আলাপ আলোচনা করে কোনো সমাধান হবে না। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কোনো সমাধান করতে না পারায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং তার পদত্যাগপত্র আহ্বায়কের কাছে জমা দেন। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, বিষয়টা নিয়ে বসা হবে। তবে এতদিন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এখনো একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
হাসিবুল আলম আরও বলেন, আমাদের উচিৎ ছিল আসলে গণ-অভ্যুত্থানে যে শক্তিটা ছিল সারা বাংলাদেশের ছাত্রদেরকে একত্রিত করে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করা। এই আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর যে অপকর্মগুলো করে গেছে তাদের প্রতিহত করা মূলত এগুলোই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য থেকে সরে এসে যখন সংগঠনের মধ্যেই দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মতো কাজ শুরু হয়েছে, তখন তিনি পদত্যাগ করাকেই শ্রেয় মনে করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল