আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া টেলিটকের ৩ হাজার কোটি টাকার ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের সংকট কাটেনি। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে টেলিটক। তারা কি পুরাতন তিন কোম্পানির মধ্য থেকেই একজনকে নির্বাচন করবে, নাকি তাদের সবার মধ্যে নতুন করে আবার দরপত্র আহ্বান করবে, নাকি আগের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করবে- এ বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়ে শিগগিরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেলিটক কর্তৃপক্ষ। ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য প্রথমবার আহ্বান করা টেন্ডারে তিনটি কোম্পানি অংশ নিলেও তাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে টেন্ডারের শর্ত না মানারও অভিযোগ প্রমাণিত হয় টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির কাছে। সবকিছু বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত তিনটি কোম্পানিকেই অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। আর এতেই আটকে যায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)-এর পরামর্শ চেয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় টেলিটক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ মার্চ টেলিটককে চিঠির মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিপিপিএ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক( উপসচিব) সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, এরূপ অবস্থায় সব দরপত্র বাতিলের নিয়ম পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালায় উল্লিখিত আছে। এর সঙ্গে আরও বিষদ নীতিমালাও দেওয়া আছে। সেই অনুযায়ী টেলিটক অগ্রসর হতে পারে। প্রকল্পটি জিটুজির আওতাভুক্ত তাই এই বিষয়ে ইআরডির মতামত গ্রহণ করতে পারে। বিপিপিএর পরামর্শ অনুযায়ী, এখন ইআরডিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম অনুসরণ করছি। এ নিয়ে ইআরডির যে পরিপত্র আছে সেটা পালন করা হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে ইআরডি সিদ্ধান্ত দেবে। এই প্রক্ষাপটে বিদ্যমান অযোগ্য ইপিসি কোম্পানিগুলোকে বাদ দিয়ে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন আরও নতুন ইপিসি কোম্পানির তালিকার জন্য টেলিটক ইআরডিকে সরাসরি আবেদন করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনটি কোম্পানি দরপত্রের নিয়ম ভেঙেছে। ফলে এই তিন কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন কোম্পানির মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা যৌক্তিক। তাদের মতে, কারসাজির নেতৃত্ব দেওয়া চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি) যদি আবারও দরপত্র আহ্বানের সুযোগ পায় তাহলে সংকট ঘনীভূত হবে। সঠিক সিদ্ধান্তই টেলিটককে এই সংকট থেকে বাঁচাতে পারে। উল্লেখ্য, চায়না মেশিনারিজ আগেও এশিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চীন সরকারের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। ২০১৩ সালে বিটিসিএলের ইনস্টলেশন অব এনজিএন বেসড, টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (এনটিএন) কাজ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল সিএমইসি। কিন্তু সেই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দুর্নীতির কারণে চীন সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে বিটিসিএলের প্রায় ১৮২ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি ভেস্তে যায়। টেলিটক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই প্রকল্পের প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। আর এটা দেখভাল করেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য চীন জোগান দিচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকার অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা। জিটুজি প্রকল্পের শর্তানুযায়ী, এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য ইআরডিকে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো হলো চায়না ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআইটিসিসি), ইউনান কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং গ্রুপ (ওয়াইসিআইএইচ) ও চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন কোম্পানি (সিএমইসি)।