ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সোমবার রাত থেকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ব্যাপক পাথর ছোড়াছুড়ি, দোকান ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। পরে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে বিবিসি জানায়, নাগপুর শহরের মহাল এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ছয়জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ অফিসার আহত হন। এরপর কোতোয়ালি আর গণেশপেঠ এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়ায়। হাজারখানেক মানুষ ব্যাপকভাবে পাথর ছুড়ে ভাঙচুর চালায়। দোকানপাট আর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। গতকাল ভোর পর্যন্ত পুলিশ নানা এলাকায় চিরুনি অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করে। বেলা ১০টায় মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, সহিংসতার কারণ এখনো খুঁজে বের করা যায়নি। ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। যদিও কারফিউ জারি আছে। পুলিশ নাগরিকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাইরে না বের হন। যেসব এলাকায় সোমবার রাত থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে, সেটি হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল কার্যালয়ের একেবারেই কাছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বাড়িও নাগপুরেই।
ঘটনার সূত্রপাত : সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় বিক্ষোভ করে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়, যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এ ব্যাপারে একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়। নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত। কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এ ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। মি. চন্দক বলেন- সবার কাছেই আবেদন- ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ বলেছেন, আওরঙ্গজেবের ওপরে মানুষের ক্ষোভের উৎস হলো বলিউডের ছবি ‘ছাভা’। গতকাল মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মি. ফডনবীশ বলেছেন, ছাভা সিনেমাটাই আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়করিও বলছেন, গুজব থেকেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন- এ ধরনের ঘটনায় শান্তি বজায় রাখাটাই শহরের ঐতিহ্য। আমি সবার কাছে আবেদন করব, কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না, শান্তি বজায় রাখুন।
এআইএমআইএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠান বলেন- প্রত্যেকের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা। কিন্তু এই ঘটনা হলো কীভাবে? প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর পেছনে কী কারণ ছিল।