জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাসহ ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। তাৎক্ষণিকভাবে তখন কারও নাম ঘোষণা করা না হলেও মঙ্গলবার তাদের নাম জানানো হয়েছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের ইমন খান জীবন, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান শেখ, বিজয় একাত্তর হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এম সাকিব, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি এস এইচ স্বাধীন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপসম্পাদক ওমর ফারুক শুভ, জগন্নাথ হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়েলস সরকার; পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের কাউসার হাসান, উর্দু বিভাগের কৌশিক হাসান পরশ, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের খালিদ মাহমুদ মিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আলম চৌধুরী, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার হোসেন, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হাসান অপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিনসহ ১২৮ জন শিক্ষার্থী। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন কয়েক বছর আগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীরাও। বহিষ্কৃত ১২৮ জনের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে। তারা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসাইন সানিম এবং মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ।
২৮৯ জন বহিষ্কার বরখাস্ত ৯ শিক্ষক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৮৯ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। মদতদাতার অভিযোগে ৯ শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওইদিন বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। উপাচার্য বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৮৯ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে, যাদের ছাত্রত্ব শেষ তাদের সনদ স্থগিত করা হবে। যারা পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়েছে, তাদের ফলাফল স্থগিত করা হবে এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। সাময়িক বরখাস্ত করা শিক্ষকরা হলেন- সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শেখ হাসিনা হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ হোসনে আরা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হোসেন তালুকদার, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার।
এদিকে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এবং রেজিস্ট্রার আবু হাসান অবসরে চলে যাওয়ায় তাদের পেনশন সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নামে থাকা আবাসিক হলসহ বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।