বরাবরের মতো এবারের বইমেলায়ও উপন্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাঠক চাহিদা বিবেচনায় উপন্যাস প্রকাশেই প্রকাশকদের আগ্রহের মাত্রাটা একটু বেশি। পাঠক চাহিদার নিরিখে এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ও প্রকাশের অপেক্ষায় থাকাসহ উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় হাজারের ওপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- অনন্যা প্রকাশিত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ ও অন্যপ্রকাশ থেকে একই লেখকের আরেক উপন্যাস ‘পরাধীনতা’, কথাপ্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের ‘শূর্পণখা’, মাহরীন ফেরদৌসের ‘জলজ লকার’, লুনা রুশদীর ‘আনবাড়ি’, ইমতিয়ার শামীমের ‘শঙ্খগহন সলপকাল’, মামুন হুসাইনের ‘স্বরচিত আত্মার পরিত্রাণ’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘উপন্যাস সংগ্রহ’, নাসির আলী মামুনের ‘হেম-বেহাগের মহারাজা’, ইকবাল আখতারের ‘গণপতি’, রেজানুর রহমানের ‘নায়ক প্রতিনায়ক’, মিজান পাবলিশার্স এনেছে মোশারফ হোসেন শাজাহানের ‘উপন্যাস সমগ্র’, অক্ষর প্রকাশনী এনেছে রশীদ হায়দারের ‘নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য’, সেলিনা হোসেনের ‘মার্গের নীল পাখি’, মঈনুল আহসান সাবেরের ‘জ্যোতির্ময়ী তোমাকে বলি’, শহীদুল্লাহ সিরাজীর ‘মায়াবী প্লাবন’, সিরাজ উদ্দিন সাথীর ‘করোনাকালের দিবা-রাত্রি’, রফিকুর রশীদের ‘চার দেয়ালের ঘর’, জেড আলমের ‘ফেইক আইডি’, মেহেরুন নেছা রুমার ‘নয়নসুখ’, জোনাকী প্রকাশনী এনেছে রুবিনা আলমগীরের ‘দীর্ঘশ্বাস’, পাঞ্জেরী প্রকাশ করেছে শাহাব আহমদের ‘পেরস্ত্রোইকা মস্কো ও মধু’, তপন বাগচীর ‘শেষ দৃশ্যের আগে’, কিঙ্কর আহসানের ‘বিবিয়ানা’, ইকবাল খন্দকারের ‘কবিরদের নিখোঁজ রহস্য’, আলম শাইনের ‘নরখাদকের দ্বীপ’, মনি হায়দারের ‘উড়িতেছে সোনার ঘোড়া’, নিমগ্ন দুপুরের ‘হোয়াইট ম্যাজিক : লাইফ অফ ডেথ’, ঐতিহ্য এনেছে শফিক রেহমানের ‘ভালোবাসা’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘লাগে উরাধুরা’, পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘ফুল কুমারী’, আফতাব হোসেনের ‘দ্বিচারী মন’, নিয়াজ মাহমুদের ‘লীলাময়ী করপুটে তোমাদের’, মুম রহমানের ‘পাঁচজন ফজলু’, শাহাদত হোসেন সুজনের ‘মাধবীলতা’, সময় এনেছে মোস্তফা কামালের “বিষাদ বসুধা’, দীপু মাহমুদের ‘নিঃসঙ্গ নটী’, সুমী শারমিনের “মেঘ বরষা ঝুম’, শোভা প্রকাশ থেকে মোস্তফা মননের “শাহজালাল’, অবসর প্রকাশনী এনেছে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস (অখণ্ড)’, ও ‘জাগড়ি’, এবং ড. সাজিদ বিন দোজার ‘ক্রাস্টেসিয়ান গ্রাফিক্স নোভেল’, আদর্শ এনেছে কামরুল হাসান রাহাতের “জং বাহাদূর’, গালীব বিন মোহাম্মদের ‘ফেরারি রাজপুত্র’, মহিউদ্দিন খালেদের ‘মারজান’, মাহবুব মোর্শেদের ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’, মুরাদ কিবরিয়ার ‘প্রেম প্রার্থনা মৃত্যু’, রকিবুল হাসানের ‘কল্যাণী ২.০’, সালাহ উদ্দিন শুভ্রর ‘আজাদি’ ইত্যাদি।
উপন্যাসের চাহিদার বিষয়ে কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক শেখ এ এম ইউনুস বলেন, উপন্যাসের প্রতি সব সময় পাঠকদের আগ্রহ একটু বেশি থাকে। তিনি জানান, তাদের প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হরিশংকর জলদাসের ‘শূর্পনখা’ উপন্যাসটির বিক্রি ভালো।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, আমাদের প্রকাশনার শফিক রেহমানের ‘ভালোবাসা’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘লাগে উরাধুরা’, পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘ফুল কুমারী’ এ তিনটি উপন্যাসের বিক্রি আশাব্যঞ্জক।
শোভা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান জানান, তার প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত মোস্তফা মননের ‘শাহজালাল’ উপন্যাসটির বিক্রি খুবই ভালো।
পাঠক সমাদৃত ইমদাদুল হক মিলনের দুই বই : এবারের বইমেলায় এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের দুটি উপন্যাস। এর মধ্যে অনন্যা প্রকাশ করেছে লেখকের ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ ও অন্যপ্রকাশ এনেছে ‘পরাধীনতা’। এর মধ্যে অনন্যা থেকে প্রকাশিত ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’ বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গেছে। গতকাল মেলার দশম দিনে সরেজমিন দেখা যায়, অনেক পাঠকই বইটি কিনতে এসে না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে গেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সংস্করণ চলে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনায় কর্মরত বাবুল হোসেন ফারুক। এদিকে অন্যপ্রকাশের জনসংযোগের উর্মি শর্মা অনন্যা জানান, ইমদাদুল হক মিলনের ‘পরাধীনতা’ বইটিও পাঠকদের হৃদয় জয় করেছে।
মেলায় মারামারি : নির্বাসিত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বইকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে অমর একুশে বইমেলায়। গতকাল মেলার দশম দিন সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের প্রকাশনা সংস্থা সব্যসাচী স্টলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী শতাব্দী ভবকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
প্রকাশনাটির দায়িত্বে থাকা শতাব্দী ভবের স্ত্রী সানজানা মেহরান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রবিবার রাত থেকে বিভিন্ন পেজ ও অনলাইন মাধ্যম থেকে প্রচার করা হয় সব্যসাচীর স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই পাওয়া যাচ্ছে। এর পর পেজ থেকে তারা আমাদের হুমকিও দেয়। বিষয়টি আমি সকালে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে জানাই। আর তসলিমা নাসরিনের বইগুলোও সরিয়ে নেই। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি ও মেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলি। বই সরিয়ে নেওয়ার পরও বিকালে দলবেঁধে কয়েকজন যুবক আমাদের স্টলের সামনে এসে তসলিমা নাসরিনের বই না পেয়ে অন্য লেখকদের বইগুলোও ছুড়ে ফেলে আমার স্টলকে তছনছ করে দেয়। এ সময় তারা নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দিলে আমার স্বামী শতাব্দী ভব জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়। এ সময় মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ এসে শতাব্দী ভবকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।