খেলাপি ঋণের কারণে দেশের আর্থিক খাত বড় রকমের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। সূত্রমতে, ডিসেম্বর ২০১১-তে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, আর ২০২৪-এর ডিসেম্বরে তা ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অন্তত ১০টি ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এজন্যই ব্যাংক খাতের দ্রুত অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ করে ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় করণীয় সম্পর্কে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক অর্থ বিভাগের প্রণীত একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল জমা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে, যা চলতি জুলাইয়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি খাদ্যেও মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৯২ শতাংশে ওঠে যায়। অবশ্য জানুয়ারি ২০২৫-এ এই চাপ ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মূলত সরবরাহ চেইনে দুর্বলতার কারণে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে ওঠে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। সূত্র জানায়, এজন্য উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, আলু ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বার্ষিক চাহিদার সঙ্গে মজুতের তুলনাভিত্তিক রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। মাঠ থেকে সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনলাইনে ভ্যাট ও রিটার্ন দাখিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য অনলাইন প্লাটফরমকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হ্রাস পাবে। ফলে আয়কর ও ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। এজন্য রাজস্ব আহরণে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগকে পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশন করা জরুরি।
সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ করণীয় হিসেবে পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকারভিত্তিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতি প্রতিকূল অবস্থায় পড়েছিল তা উত্তরণে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির পরিবর্তন জরুরি ছিল।
নীতি পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসা, যদিও তা আগামী জুনের মধ্যে ৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটি নিরসন সম্ভব হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসবে। সূত্র উল্লেখ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও শ্রমিক অসন্তোষ স্বল্পমেয়াদে অন্যতম ঝুঁকির উৎস হতে পারে।