ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারবিরোধীদের কাছে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে।
‘যদি কিছুই ভুল না হয়, তাহলে আমরা এখানে বসেছি কেন? কোথাও না কোথাও ত্রুটি হয়েছেই, আর সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে’, বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বিরোধীদলের নেতাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার এক বর্বর জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহতের পর পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের অবহিত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার এ সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে। বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর একাধিক নেতা নিরাপত্তাব্যবস্থার দৃশ্যমান ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ‘কোথায় ছিল নিরাপত্তা বাহিনী? সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী কোথায় ছিল?’ সরকারের কাছে তারা এসব জানতে চান বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো। এর জবাবে সরকারের ঊর্ধ্বতনরা বলেছেন, অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের কাছে বৈসরন এলাকাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কিছু জানায়নি। সাধারণত, জুনের অমরনাথ যাত্রা পর্যন্ত বৈসরনে যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকে। ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর নিয়েও বৈঠকে উদ্বেগ জানানো হয়। প্রত্যুত্তরে সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলটি এমন জায়গায় যেখানে পৌঁছাতে উঁচু পাহাড়ি পথে ৪৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয় এবং এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রস্তুতিও ছিল না। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু সাংবাদিকদের জানান, ভারতকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। এ ব্যাপারে সব দল একমত হয়েছে।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের সঙ্গে আছে বলে জানিয়েছে সব দল। সরকার যে পদক্ষেপই নিক না কেন, তাতে তারা সমর্থন দেবে বলে সব দল এবং তাদের নেতারা এক সুরে জানিয়েছেন। ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বৈঠকটি শেষ হয়েছে’, বলেছেন তিনি। লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও একই কথা বলেছেন। ‘সবাই পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন বিরোধীরা, বলেছেন তিনি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে এ সর্বদলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, সংসদবিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজ্জু, রাজ্যসভার নেতা জেপি নড্ডা, রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে, লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুলসহ আম আদমি, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, এনসিপি, শিবসেনা, এসপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে সর্বদলীয় বৈঠকের রেওয়াজ আছে। এর আগে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা ও পরের বছর ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার সময়ও এমন সর্বদলীয় বৈঠক দেখা গেছে।-ইন্ডিয়া টুডে