খুলনা নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই খুন, রাহাজানি গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। কিশোর গ্যাং, মাদক কারবার, হুমকি, চাঁদাবাজি ও দখলের ঘটনায় দিশাহারা নগরবাসী। বিশ্লেষকরা বলছেন, নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরাও নির্দেশনা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা ও আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই সুকান্ত দাসকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে খুলনায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন ছাত্র-জনতা। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা কেএমপি সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ও সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে রূপসা স্ট্যান্ড রোড- খানজাহান আলী রোডসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে গতকাল দুপুরে এসআই সুকান্তকে খুলনা সদর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে কেএমপি। এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, চুয়াডাঙ্গায় কর্মস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারের বিধিমালা অনুসরণ করে আদালতে সোপর্দ করার কার্যক্রম চলছে। তবে তাকে কেন খুলনায় আটকের পরও ছেড়ে দেওয়া হলো তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করে আন্দোলনে অনড় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
অপরদিকে, কেএমপি কমিশনারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি নেতারা। মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিলটন জানান, এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ কমিশনার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও প্রত্যাহার এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা এক বিবৃতিতে জানান, খুলনা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি কমিশনারের ব্যর্থতার ফসল। হত্যাকা ও সন্ত্রাসী কর্মকা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেএমপির কমিশনারকে অপসারণ করা না হলে খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে এসআই সুকান্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তার বিরুদ্ধে খুলনায় চারটি মামলা রয়েছে। তবে মামলা থাকার পরও ওই রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরই বুধবার দুপুর থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচিতে নেমেছে বিক্ষুব্ধরা।