প্রায় দেড় বছরের প্রস্তুতির পর রাশিয়ার চারটি সামরিক ঘাঁটিতে ৪০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছে ইউক্রেন।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এসবিইউ সিকিউরিটি সার্ভিস পরিচালিত ‘স্পাইডারস ওয়েব’ অপারেশনের আওতায় এই হামলায় ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
এসবিইউ সূত্র ফরাসি গণমাধ্যম এএফপি’কে বলেছে, রবিবারের এই হামলার প্রস্তুতিতে প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। কাঠের ভ্রাম্যমাণ কেবিনে গোপন ড্রোন রাখা ও সেগুলো বিমানঘাঁটির কাছে নেওয়া এবং এরপর সময়মতো আঘাত হানতে এই সময় লেগেছে।
রাশিয়া তার পাঁচটি অঞ্চলে এই হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে একে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ওদিকে, ইউক্রেনে রাতভর সেখানে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
এসব ঘটনা এমন সময় হলো যখন সোমবার (২ জুন) থেকে দ্বিতীয় দফার শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকরা ইস্তান্বুলের পথে রয়েছেন।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেছিল। ২০১৪ সালে দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া দক্ষিণাঞ্চলসহ ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে।
রবিবার (১ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি পোস্টে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি অভিযানে সাফল্যের জন্য এসবিইউ প্রধান ভাসিল মালিউককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই অভিযানের অফিস ছিল রাশিয়ার এফএসবি’র কাছে।
এফএসবি হচ্ছে রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা সংস্থা।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই অভিযানের সঙ্গে জড়িতরা হামলার আগেই নিরাপদে রাশিয়া ছেড়ে এসেছেন।
এসবিইউ ধারণা করছে, হামলায় রাশিয়ার কৌশলগত বিমান পরিবহনের প্রায় সাত বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তারা শিগগিরই বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছে। তবে ইউক্রেনের দাবির সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।
যদিও এসবিইউ’র সূত্র এএফপি’কে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে।
যেসব ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে সেগুলো হলো সাইবেরিয়ার ইরকুতস্কের বেলায়া, রাশিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ওলেনিয়া, মধ্য রিয়াজানের ডিয়াজিলেভো ও মধ্য ইভানভো অঞ্চলের ইভানভো ঘাঁটি।
এসবিইউস সূত্র বলেছে, যেসব যুদ্ধবিমানে হামলা হয়েছে তার মধ্যে পরমাণু সক্ষমতা থাকা টিইউ-৯৫, টিইউ- ২২ এম-৩ ও এ-৫০ বোমারু বিমান আছে।
সূত্র বলেছে, এসবিইউ প্রথমে এফপিভি ড্রোন রাশিয়ার ভেতরে নিয়ে যায়। এরপর সেগুলো ভ্রাম্যমাণ কাঠের কেবিনের ছাদের সাথে সেট করা হয়েছে। পরে কার্গোতে স্থাপন করা হয়েছে।
এরপর রিমোটের সাহায্যে ছাদ খুলে ‘যথাসময়ে’ ড্রোনগুলো রুশ বোমারু বিমানগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে।
ইরকুতস্ক গভর্নর ইগর কবজেভ বেলায়া ঘাঁটিতে হামলার কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, একটি ট্রাক থেকে হামলা চালানো হয়েছে।
এলাকাটি নিরাপদ করা হয়েছে এবং জীবনের প্রতি আর কোনো হুমকি নেই বলে তিনি পরে টেলিগ্রামে জানিয়েছেন।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোও ট্রাক থেকে বের হওয়া ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করেছে। তারা মুরমানস্কেও হামলার খবর দিয়েছে। তবে বলেছে, সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করেছে। ইরকুতস্কে হামলার খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে পাঁচটি অঞ্চলে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে।
তারা দাবি করেছে, ইভানভো, রিয়াজান ও আমুর অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। তবে এসবিইউ আমুর ঘাঁটির কথা বলেনি।
মুরমানস্ক ও ইরকুতস্কে বেশ কয়েকটি বিমানে আগুন ধরেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে ও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তারা দাবি করেছে, হামলাকারীদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ওদিকে ইউক্রেনে ৪৭২টি ড্রোন হামলার পাশাপাশি সাতটি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের স্থল বাহিনী বলেছে তাদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মিসাইল হামলায় ১২ জন সেনা মারা গেছে। এই ঘটনার পর পদত্যাগ করেছেন ওই বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মিখাইলো ডিরাপাতাই।
সূত্র : এএফপি ও এপি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত