বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি ১৩১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয় বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। এর আগে ১৬ মার্চ হাই কোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
২০১৯ সালে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। নৃশংস এ হত্যাকান্ডে সে সময় দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদ ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এ রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে বিচারক বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন এবং নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। এ ঘটনা দেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এ দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে ২৪ ফেব্রয়ারি শুনানি শেষে হাই কোর্ট ১৬ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। হাই কোর্ট ডেথ রেফারেন্স অনুমোদন করেন এবং আপিলগুলো খারিজ করে রায় দেন। ফলে বিচারিক আদালতের দন্ডাদেশ বহাল থাকে।
মৃত্যুদ প্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনীক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান ম ল প্রকাশ জিসান ও মুজতবা রাফিদ।
যাবজ্জীবন কারাদ প্রাপ্তরা হলেন অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ও তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।