বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে উত্তর ইউরোপীয় দেশ ফিনল্যান্ড। গতকাল বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টারে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ফিনল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা এ আগ্রহের কথা জানান। পরে তিনি গণমাধ্যমের কাছে এ আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে ইতোমধ্যে কিছু ফিনিশ কোম্পানির সহযোগিতামূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, আমরা সেটি আরও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী।
রাষ্ট্রদূত জানান, ফিনল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে তাঁদের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। প্রতিনিধিদলটি গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছে। গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি, টেকসই নির্মাণ, প্রকৌশল, জ্বালানি এবং টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়নে ফিনল্যান্ডের বিশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে বৈঠকে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন বিজনেস ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি ও শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর-সি (অপারেশন)-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিও) শাহেদ জাহিদ তাঁদের স্বাগত জানান। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমানসহ গ্রুপের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শাহেদ জাহিদ বলেন, ‘বৈঠকে ফিনিশ প্রতিনিধিদলটি আমাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি ও এসব ইন্ডাস্ট্রিতে কী কী উপায়ে তাঁরা যুক্ত হতে পারেন সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের সিমেন্ট, পেপার, প্রিকাস্ট বিল্ডিংসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে জানিয়েছি। তাঁরা অনেক আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং আমাদের সিমেন্ট ফ্যাক্টরির উৎপাদনব্যবস্থায় আরও দক্ষতা আনতে ফসিল ফুয়েলের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক জ্বালানি প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’
বসুন্ধরা গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বহুমাত্রিক শিল্প রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিগুলো মোটামুটি তৈরি। তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বল্প সুদে অর্থায়নের অভাব রয়েছে। ১৪-১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে যে কোনো ব্যবসা লাভজনক করা কঠিন। বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় ২-৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। তাঁদের জানিয়েছি স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ পেলে আমরা এসব শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে পারব। অন্যথায় ১৫-১৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে তাঁদের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা অর্থায়নের ব্যাপারে তাঁদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
শাহেদ জাহিদ বলেন, ‘ফিনিশ প্রতিনিধিদলটি আমাদের স্বাস্থ্য খাতেও আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁদের আইসিইউ সেবা বিশ্বমানের। আমাদের হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ-সংকট আছে। চিকিৎসায় আস্থা না পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ দেশের বাইরে যায়। আমরা তাঁদের বসুন্ধরার সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি। তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। ফিনল্যান্ড বিনিয়োগ করলে তাঁদের সঙ্গে যৌথভাবে হাসপাতাল, সৌরশক্তি, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অনেক খাতে বিপ্লব আনার সুযোগ আছে।’
বৈঠক নিয়ে আশা প্রকাশ করে শাহেদ জাহিদ বলেন, এটা দেশের জন্য খুবই ভালো সংবাদ যে বাইরের দেশগুলো এখানে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে এবং দেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।