জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে পরিবারের সঙ্গে একটু নির্ভার সময় কাটানোর জন্য কক্সবাজারে আনন্দভ্রমণে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ভ্রমণেই চিরবিদায় নিলেন এক পরিবারের পাঁচ সদস্য। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের উদয় পাটোয়ারীর পরিবারের হাসি মিলিয়ে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়।
উদয় পাটোয়ারী (৪৩) মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একজন কর্মী ছিলেন। দীর্ঘদিন কর্মব্যস্ততার কারণে প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা হচ্ছিল না। তাই স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে মাইক্রোবাসে করে উদয় পাটোয়ারী, স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৮), ছেলে সামাদ পাটোয়ারী (৪), শ্যালিকা ফারহানা মজুমদার টিজা (২৫) ও শ্যালক শাহেদ মজুমদার লিশানকে (২২) নিয়ে কক্সবাজারে উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে মা রুমি বেগম (৬৫) ও বোন সাদিয়া আক্তার পাটোয়ারী (২৪), পরে ফালগুনকরা থেকে শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী (৫৫) যোগ দেন ভ্রমণদলে। হাসি-আনন্দে ভরা সেই যাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হয় শোকে।
বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ঢালা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মাইক্রোবাসটির। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান পাঁচজন— উদয়ের স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা, শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী, শ্যালিকা ফারহানা মজুমদার টিজা, মা রুমি বেগম ও বোন সাদিয়া আক্তার পাটোয়ারী।
দুর্ঘটনায় উদয় পাটোয়ারী, তার ছেলে সামাদসহ আরও চারজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আহতদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, চট্টগ্রামমুখী মারসা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান এবং চারজন আহত হন।
উদয়ের শ্বশুর আবদুল মন্নান মজুমদার বলেন, জামাতার উদ্যোগে সবাই একসঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিল। আনন্দের সেই যাত্রা যে এমন শোকের হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।
এদিকে, চৌদ্দগ্রামের চান্দিশকরা গ্রামে এখন শুধু শোকের মাতম। হারানো প্রিয়জনদের স্মৃতিতে ভাসছে গোটা পরিবার ও এলাকাবাসী।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল