‘শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ে গড়ি নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ’—এ স্লোগানে ফেনীতে পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২৫। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী দিবসটি ১২ জুন পালিত হলেও ঈদুল আজহার ছুটির কারণে বাংলাদেশে দিবসটি ১৯ জুন উদযাপন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল—"স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি—এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।"
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক প্রকৌশলী শরীফ আহাম্মেদ আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন, শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) শ্যামল চন্দ্র সরকার, শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) মো. ইয়াসিন হোসেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, কলকারখানার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, "শিশুশ্রম একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে শিশুশ্রমমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে আইনি কাঠামো, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ করা নিষিদ্ধ। ১৪-১৮ বছর বয়সীদের কিশোর হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তাদের জন্য নির্ধারিত সময় ও পরিবেশের নিয়ম রয়েছে। যেমন: দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা এবং সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ ৩০ ঘণ্টা কাজ করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে কোনো শিশু-কিশোরকে কাজ করানো যাবে না।
সভায় উল্লেখ করা হয়, শিশুশ্রম নিরসনে ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা হলো:
- জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০
- আইএলও কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ অনুসমর্থন
- ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা ও নিষেধাজ্ঞা
- জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২৫)
- বিশেষ পরিদর্শন ও মামলা দায়ের
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শিশুশ্রম সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ৩.৫৩ মিলিয়ন শিশু শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে, যা ২০১৩ সালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে; এখনো কৃষি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রমের হার বেশি।
সভায় শিশুদের শিক্ষা, নিরাপদ শৈশব ও খেলাধুলার অধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সভাপতি বলেন, "শিশুশ্রম শুধু সামাজিক সমস্যা নয়, এটি জাতির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।"
আলোচনা শেষে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়:
- নিজের কর্মস্থল শিশুশ্রমমুক্ত রাখুন।
- শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের পরিবারকে স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করুন।
- কোথাও শিশুশ্রম দেখলে ১৬৩৫৭ নম্বরে কল করুন অথবা স্থানীয় পরিদর্শন দপ্তরে জানান।
বিডি প্রতিদিন/আশিক