সাংগ্রাই উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব। এই উৎসব মারমাদের নববর্ষের সূচনার পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সাংগ্রাই উৎসব বর্তমানে শহর ও গ্রামে মিলিয়ে বেশ বড় পরিসরে উদযাপিত হয়। সাংগ্রাইয়ে রঙিন মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঘিলা খেলা, জলকেলি উৎসব, নানা পদের খাবার ও পিঠাপুলি তৈরি হয়ে থাকে। এটি বর্মী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় (সাধারণত ১৩-১৬ এপ্রিল) উদযাপন করা হয়। সাংগ্রাইয়ের সবচেয়ে আনন্দঘন অংশ হলো জল ছিটানো উৎসব। এলাকাভিত্তিক আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করে নিতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ জল উৎসব হয়ে থাকে।
নববর্ষ বরণ উৎসব ‘সাংগ্রাই’র অংশ হিসেবে জলকেলিতে বৃহস্পতিবার শহরের রাজার মাঠে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের সাথে উৎসবে যোগ দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার বন্ধুরা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের শুভার্থী উয়ই সিং মার্মা, রবিন তঞ্চঙ্গ্যা, উঅং সিং মার্মা, রংথুই ম্রো, স্বর্ণা চাকমা, চন্দ্রিমা বড়ুয়া, উ হ্লা শৈ মার্মা প্রমুখ।
মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জল উৎসবের জনপ্রিয় গান গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন, ঠিক সেই সময়ে হাজার হাজার লোকের কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে বান্দরবান রাজার মাঠ। এ যেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছেন তারা। চারদিকে মারমা সংগীতের মূর্ছনা, আর নাচ-গানে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুসহ সবাই।
বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রবিন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর নতুন বর্ষবরণ উৎসব ‘মাহা সাংগ্রাই’ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালন করে থাকে। মৈত্রী পানি বর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের দুঃখ, গ্লানি ধুয়ে-মুছে সকলের প্রতি সুখ, সমৃদ্ধি কামনা ও মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানায়। এতে মারমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও অংশগ্রহণ করে এবং আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি উয়ই সিং মার্মা বলেন, এই উৎসব আমাদের সংস্কৃতি, ঐক্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অনন্য উদযাপন। এটি কেবল একটি উৎসবকে প্রতিনিধিত্ব করে না। আমাদের পরিচয়, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সম্প্রীতিও তুলে ধরে। আমরা আনন্দিত যে এবারের জলকেলি উৎসবে বসুন্ধরা শুভসংঘ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বসুন্ধরা শুভসংঘ সবসময়ই শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার উন্নয়নে সমাজের পাশে রয়েছে এবং আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই