গ্রামবাংলার শিশুদের খেলাধুলার ঐতিহ্য ছিল কাঠের খেলনা গাড়ি। একসময় গ্রামে-গঞ্জে এই কাঠের খেলনা গাড়িগুলোর প্রচলন ছিল। ঈদ, মেলা এবং বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বিক্রি করা হতো এসব খেলনা। কোনো মেলায় এসব ছাড়া যেন পূর্ণতা পেতো না। তবে বর্তমানে প্লাস্টিকের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের খেলনা গাড়ির জৌলুস।
একসময় সৈয়দপুরের অর্ধশতাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন এ পেশায়। বর্তমানে বিক্রি আর চাহিদা কম থাকায় পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকেই। কালের বিবর্তনে যেমন ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ শিল্প, তেমনি কাঠ দিয়ে খেলনা বানানো কারিগররা এ পেশা থেকে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। কেউ আবার বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই পেশায় কাজ করছেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সড়কের পাশে থরে থরে সাজানো ট্রাক, ঠেলা গাড়ি, কেরকেরি গাড়ি, ঢোল গাড়িসহ নানা ডিজাইনের আকর্ষণীয় সব গাড়ি। দিন-রাত পরিশ্রম করে এসব গাড়ি তৈরি করছেন কারিগররা। কেউ বা তুলিতে করছেন রঙ-বেরঙের ডিজাইন। আবার অনেকেই লাগাচ্ছেন চাকা। আবার কেউ বা কাঠ খোদাই করে তৈরি করছেন গাড়ির ফ্রেম। তৈরি হচ্ছে নানান মডেলের আকর্ষণীয় গাড়ি।
নাসিমা বেগম বলেন, আমি বাড়ির কাজ করার পাশাপাশি এখানে এসে কাজ করি। আগে বিক্রি খুব ছিল। এখন তেমন বিক্রি হয় না। একসময়ে বাজারও কেড়েছিল এই কাঠব্রান্ডের গাড়ি। তবে বর্তমানে পরিবেশবান্ধব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলনা টিকিয়ে রাখতে কারিগররা পড়েছেন চরম বিপাকে।
খেলনা তৈরির কারিগর সেলিম উদ্দিন বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এই পেশায় জড়িত। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমি এই পেশায় কাজ করছি। ঈদ-পূজা ছাড়া এসব খেলনা বিক্রি হয় না। এখন প্লাস্টিকের কারণে খেলনার চাহিদা খুবই কম। খেলনা তৈরি করে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে। গ্রামবাংলার এসব খেলনা কেউ নিতে চায় না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে আমরা এ পেশা টিকিয়ে রাখতে পারব।
ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ বলেন, কাঠের খেলনার ব্যবহার বাড়াতে পারলে এই শিল্পকে ধরে রাখা সম্ভব। আবহমান বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেলনা বাজারে টিকিয়ে রাখার দাবি সকলের।
নীলফামারী বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক নুরেল হক বলেন, সৈয়দপুরে আগে হস্ত ও কুটির শিল্পের দ্বারা কাঠের বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রী উৎপাদিত হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বা অন্যান্য খেলনার কারণে হস্ত ও কুটির শিল্প বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। এসব উদ্যোক্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও ঋণের মাধ্যমে যুগোপযোগী খেলনা বা এই শিল্পটি বিকাশের জন্য বিসিক সবসময় পাশে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ