২২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাষ্ট্রায়ত্ত বেঙ্গল টেক্সটাইল মিল। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন মিলের সহস্রাধিক শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকার মেশিনারিজসহ মূল্যবান সম্পদ। একসময় কর্মচাঞ্চল্য আর কোলাহলপূর্ণ মিল এলাকাটিতে এখন সুনসান নীরবতা। সরেজমিন মিলটি ঘুরে দেখা যায়, পুরো এলাকাটি ঘাস-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। কারখানা ও সংলগ্ন ভবনগুলোর দরজা-জানালা খুলে পড়ছে। বর্তমানে মিলটির অভ্যন্তরে ভূতুড়ে পরিবেশ দেখে বোঝাই যায় না যে, এক সময় এখানে উৎপাদিত উন্নতমানের সুতা দেশের বস্ত্রশিল্পের চাহিদার বড় একটি অংশ জোগান দিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে নওয়াপাড়ায় ১৬.৩২ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস। ১৯৬৬ সালে মিলে উৎপাদন শুরু হয়। যেখানে উন্নতমানের সুতা উৎপাদন হতো। ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। তবে লোকসানে পড়ায় এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে মিলটি চালু রাখার অনুমোদন দেয় সরকার। পরে গোপাল চন্দ্র সাহা নামে এক ব্যবসায়ী ২ লাখ ১০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় মিলটি চালু করেন। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানে তিনিও ২০২৩ সালের নভেম্বরে মিলটি বন্ধ করে দেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিলটিতে থাকা মেশিনারিজের মেয়াদকাল বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। এগুলো এখন ব্যবহার অনুপযোগী। এসব মেশিনারিজের কার্যক্ষমতা কম, বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে, ফলে ডেমারেজও বেশি হচ্ছিল। এর বিপরীতে বর্তমানে অনেক আধুনিক মেশিনারিজ পাওয়া যায়। মিলটিতে বর্তমানে দুজন কর্মকর্তাসহ ২২ জন কর্মরত আছে। যারা দিন-হাজিরার ভিত্তিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মিলটিতে একসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন চানপদ। বর্তমানে বেকার জীবনযাপন করা চানপদ বলেন, মিল বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকদের বেশির ভাগই এলাকা ছেড়েছেন। মিলটি ঘাস, বন-জঙ্গলে ভরে যাচ্ছে। মিলগেটের সামনে স্টেশনারি দোকানের মালিক আক্তার হোসেন বলেন, চালু থাকার সময় মিলগেটের সামনে রাস্তার পাশ দিয়ে মার্কেট গড়ে ওঠে। মিল বন্ধ হওয়ার পর তাদের ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। স্থানীয় পীর মোহাম্মদ বলেন, একসময় রেকর্ড উৎপাদনের জন্য এই মিল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিল। অথচ বন্ধ থাকায় মিলের জাপানি মেশিনারিজ সব নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ে আছে বিশাল সম্পত্তি। মিলটি চালু করতে পারলে এলাকার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে, বস্ত্রশিল্পের সুতার চাহিদার বড় একটি অংশ এখান থেকে জোগান দেওয়া যাবে। নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক কমিশনার শেখ আসাদুল্লাহ বলেন, যশোর-নওয়াপাড়া সড়কের গা ঘেঁষে ১৬.৩২ একরের মূল্যবান এ সম্পত্তিটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।
প্রতি বছর প্রচুর সুতা আমদানি করতে হয়। সরকার টেক্সটাইল মিলটি চালুর উদ্যোগ নিলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপক (স্পিনিং) ও মিল ইনচার্জ মো. আতিকুর রহমান বলেন, ফের চালু করার ব্যাপারে বিটিএমসির চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও জুট করপোরেশনের কর্মকর্তারা মিলটি পরিদর্শন করেছেন।