‘আপু আপনার চেইনটা আমার পছন্দ হয়েছে’-এ কথা বলেই এক নারীর স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান ছিনতাইকারী। বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার শহরের গোলদিঘীর পাড়ে মন্দিরের সামনের ঘটনা এটি। ছিনতাইয়ের শিকার ওই নারীর নাম অমিতা নাথ। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। শুধু ওই ঘটনাই নয়, শহরে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ঘটছে অহরহ ছিনতাই।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারীদের কয়েকটি চক্র। এদের শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলা যায়, অনিরাপদ হয়ে উঠেছে কক্সবাজার শহর। সমুদ্রসৈকতের ঝাউবাগান ও সৈকতে নামার বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তাঁরা পর্যটকদের মালামাল লুট ও ছিনতাই করে। পর্যটক, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ছিনতাইকারীর কবল থেকে রক্ষা পায়নি খোদ কক্সবাজার শহরে টহলরত পুলিশও। ছিনতাইয়ের কাজে নম্বরবিহীন মোটরযান ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল হোসেন সরকার বলেন, কক্সবাজার শহরের ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে- এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এমনকি আমার ফাঁড়ির (শহর পুলিশ ফাঁড়ি) পুলিশ সদস্যও ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে এবং ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রমে একটু ভাটা পড়েছিল। এই সুযোগে অপরাধী চক্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিছিন্ন কিছু ঘটনা সংগঠিত হয়। অপরাধ নির্মূলে পুলিশ কাজ করছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে জেলায় ১৪টি ডাকাতি মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪০টি দস্যুতা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৯ জন। এ ছাড়া মানব পাচারের ১২টি মামলায় ১৫৮ জন ভিকটিম উদ্ধার করা হয়েছে। ১৪১টি চুরি ও ৪২টি সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা ও পুলিশের তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী প্রাইমারি স্কুল, কলাতলী ডিভাইন রোড, সমুদ্রসৈকতের ঝাউবাগান, সৈকতপাড়া, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে, কটেজ জোন, হোটেল কল্লোলের সামনে, জাম্বুর মোড়, হাসপাতাল সড়ক, পেট্রোল পাম্প, পান বাজার, গোলদিঘীর পাড়ে কবরস্থান রোড, বৈদ্যঘোনা ১০ তলা বিল্ডিংয়ের সামনে, বৌদ্ধমন্দির গেট, জাদিরাম পাহাড়ের ওপরে, ক্যাং মাঠে, মাইক সার্ভিস রোড, খুরুশকুল রাস্তার মাথা, খুরুশকুল পুরাতন ব্রিজ, বিজিবি ক্যাম্পের আম গাছ তলা ও বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারী চক্র দাপিয়ে বেড়ান। তারা সুযোগ বুঝে ছিনতাইসহ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ছিনতাইসহ অপরাধ রোধে কাজ করা কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থান পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ছিনতাই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। ডিবি, থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।