যশোর শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘতম নদ ভৈরব। এর পানিতে যে কোনো জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মাছ বা যে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য পানিতে ডিজলভড অক্সিজেন (ডিও) বা দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫-এর ওপরে থাকা দরকার। সেখানে ভৈরব নদে যশোর শহর অংশে একটি পয়েন্টে ডিওর পরিমাণ ৩ দশমিক ৮১।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বর থেকে যশোরের ১৯টি নদীর পানি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। নভেম্বরে চারটি নদীর ৬টি পয়েন্ট থেকে, ডিসেম্বরে চারটি নদীর ৫টি পয়েন্ট থেকে এবং চলতি মাসের শুরুর দিকে আরও চারটি নদীর ৫টি পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্য। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পাঠানো ৮টি নদীর পানির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় ভৈরব নদের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৮১। এখান থেকে মাইলখানেক দূরে ঢাকা রোড ব্রিজের নিচের পানিতে ডিওর মান পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ৬৯। এ ছাড়া মুক্তেশ্বরী নদীতে ৪ দশমিক ২৭, কপোতাক্ষ নদে ৪ দশমিক ২৮ এবং বেতনা নদীতে ৪ দশমিক ১১ মাত্রায় ডিও পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেকটি নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করে সেগুলোতে ডিজলভড অক্সিজেন (ডিও), বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিম্যান্ড (বিওডি), ক্যামিকেল অক্সিজেন ডিম্যান্ডসহ (সিওডি) আরও বেশকিছু বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হয়। ভৈরবসহ চার নদীতে ডিও এবং বিওডি উভয়ই নির্দিষ্ট মাত্রার অনেক নিচে পাওয়া গেছে। জেলার বাকি নদীগুলো- নবগঙ্গা, চিত্রা, ইছামতি, কালিন্দি, আফ্রা, হাপরখালী, শ্রী, হরি, টেকা, হাকর, আতাই, কোদালিয়া, আমড়াখালি ও দায়তলা নদীর পানিও খুব দ্রুত পরীক্ষা করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক বলেন, ডিও-৫ এর নিচে নামলে সেই পানি জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে। এটাকে ‘সংকটাপন্ন অবস্থার দিকে যাওয়া’ হিসেবে ধরা হয়। আর ডিও ৩-এর নিচে নামলে সেটাকে দূষিত বা সংকটাপন্ন বলা যায়। সে হিসেবে ভৈরব, বেতনা, কপোতাক্ষ, মুক্তেশ্বরী নদীর পানি সংকটাপন্ন অবস্থার দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্প কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পানি, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যমিশ্রিত পানি ক্রমাগত নদীতে পড়তে থাকলে ডিওর মান কমে যায়। এসব বর্জ্যরে সঙ্গে যে পরিমাণ জৈব ও অপচনশীল পদার্থ থাকে, সেগুলো পচানোর জন্য নদীর পানিতে যথেষ্ট অক্সিজেন থাকে না। তখন জৈব পদার্থগুলো কিছু পচে, কিছু পচে না। ওই স্থানে ফসফিন, মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে গন্ধ ছড়ায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি এত বিস্তৃত যে সবাইকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর ধারের প্রতিষ্ঠানগুলোর তরল বর্জ সরাসরি যাতে নদীতে না পড়ে, সেজন্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্য বেশ কয়েকটি মামলাও করা হয়েছে। তিনি জানান, গত তিন মাসে নদীর ধারের ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যশোর পৌরসভা, পিডব্লিইডি, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে যাতে তারা তাদের বর্জ্যপানি ট্রিটমেন্ট করে নদীতে ফেলে।