চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটিকে প্রথম দিনের প্রতিচিত্র বলা যায়! প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছিল। হারিয়েছিল ৭ উইকেট। দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে সফরকারীদের মতো না হলেও ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছে নাজমুল বাহিনীর। গতকাল দিনের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়েকে অলআউট করেছে টাইগাররা। এরপর বিনা উইকেটে শয়ের ওপর রান তুলে প্রথম সেশন পার করে। দ্বিতীয় সেশনে টাইগাররা হারায় ৩ উইকেট এবং তৃতীয় ও শেষ সেশনে হারায় আরও ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ৭ উইকেটে ২৯১ রান করে বাংলাদেশ। ৬৪ রানে এগিয়ে ও ৩ উইকেট হাতে নিয়ে আজ তৃতীয় দিন ব্যাটিং করবে টাইগাররা। দ্বিতীয় দিন টাইগারদের ব্যাটিং দৈন্যের দিনে সেঞ্চুরি করেন বাঁ হাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম। এ ছাড়া ৩৩ ইনিংস পর বাংলাদেশের ওপেনাররা শতরানের জুটি গড়েন। সাদমানের সঙ্গে রান করেছেন তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়ও।
সফরকারী জিম্বাবুয়ে প্রথম দিন শেষ করে ৯ উইকেটে ২২৭ রান তুলে। স্পিন ভেলকিতে তাইজুল নেন ৫ উইকেট। গতকাল দিনের প্রথম বলে ব্লেসিং মুঝারাবানিকে উইকেটরক্ষক জাকের আলি অনিকের গ্লাভসবন্দি করেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে তাইজুল ৬ উইকেট নেন ৬০ রানের খরচে। টাইগার দুই ওপেনার সাদমান ও এনামুল বিজয় ব্যাট করতে নামেন। দুজনে প্রথম সেশন পার করেন বিনা উইকেটে ১০৫ রান তুলে। সাদমান ৬৬ ও এনামুল ৩৮ রানে ব্যাট করছিলেন তখন। এনামুল তিন বছরের ব্যবধানে খেলতে নামেন টেস্ট। ২০২২ সালে জুনে সর্বশেষ খেলেছিলেন এনামুল। লাঞ্চ বিরতির পর খেলতে নামার পর খুব বেশি সময় স্থায়িত্ব হয়নি দুই ওপেনারের জুটি। ৩১.৩ ওভারে দলীয় ১১৮ রানে আউট হন এনামুল বিজয়। লাঞ্চ সেশনে অপরাজিত ছিলেন ৩৮ রানে। লাঞ্চের পর আউট হন ব্যক্তিগত ৩৯ রানে। এনামুল বিদায় নেওয়ার আগে ওপেনারদের অপেক্ষার অবসান ঘটে। বাংলাদেশ সর্বশেষ শতরানের জুটি গড়েছিল ২০২২ সালে ডিসেম্বরে। ভারতের বিপক্ষে ১২৪ রানের জুটি গড়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান ৩৩ ইনিংস আগে। সাদমান ও এনামুল জুটি ১৩ ইনিংস পর ফের পঞ্চাশের জুটি গড়েন। শতরানের জুটি গড়লেও এনামুল হক হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে। ৮০ বলের ইনিংসটিতে ছিল মাত্র ৪টি চার। তার ছয় টেস্ট ক্যারিয়ারে এটাই সর্বোচ্চ রান। আগের ৫ টেস্টে তার মোট রান ছিল ১০০, গড় ছিল ১০। সর্বোচ্চ ছিল ২৩।
শেষ সেশনে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ৬৪ রানে এগিয়েছে। অপরাপর ব্যাটাররা বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হলেও দিনটিকে নিজের করেন বাঁ হাতি ওপেনার সাদমান। আকাশসমান চাপ সামলে খেলেন তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস। ১২০ রানের ইনিংসটি সাদমানের ২২ টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২৭ ইনিংস আগে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ইনিংসটি ছিল ১১৫ রানে হার না মানা। হাফ সেঞ্চুরি করেন ২টি। সাদমানের ১২০ রানের ইনিংসটি খেলেন ১৮১ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায়। হাফ সেঞ্চুরি করেন ৭৮ বলে ৭ চারে।
সাদমানের দিনে অবশেষে রানে ফিরেছেন সাবেক অধিনায়ক ও দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ভালো খেলতে খেলতে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন সাবেক অধিনায়ক। রান আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৪টি চার ও একটি ছক্কা। সিলেটে হাফ সেঞ্চুরি করলেও গতকাল টাইগার অধিনায়ক নাজমুল আউট হন ব্যক্তিগত ২৩ রানে। সিলেটে ৫৬ ও ৪৭ রানের ইনিংস খেলা সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক আউট হন বক্তিগত ৩৩ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস
৯০.১ ওভার ২২৭/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস
৮৭ ওভারে ২৯১/৭ (সাদমান ১২০, এনামুল ৩৯, মুমিনুল ৩৩, শান্ত ২৩, মুশফিক ৪০, জাকের ৫, মিরাজ ১৬*, নাঈম ৩, তাইজুল ৫*; এনগারাভা ১১-২-৪১-০, মুজারাবানি ১৬-৪-৪৪-১, মাসাকাদজা ২৯-৫-৭৭-১, মাসেকেসা ১৪-১-৪৪-৩, মাধেভেরে ৮-০-২৯-০, বেনেট ৯-১-৪৯-১)