কেমন চলছে ক্রীড়াঙ্গন? অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পার হওয়ার পর এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ক্রীড়াঙ্গনেও অনিয়মের পাহাড় গড়ে ছিল। অধিকাংশ ফেডারেশনে যোগ্যতরদের বদলে অযোগ্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। রাজনীতিকরণ, স্বজনপ্রীতি ছিল ও ভয়াবহ অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও ঘটে। আওয়ামী লীগের পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁর কিছু সাহসী পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। নির্বাচিত হলেও অধিকাংশ ফেডারেশন ছিল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বন্দি। দায়িত্ব নিয়েই ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে ফেডারেশনগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করেন। এজন্য তিনি সার্চ কমিটিও গঠন করেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, এক পদে কেউ দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না।
হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে ক্রীড়া উপদেষ্টা ক্রীড়াঙ্গনের স্বচ্ছতা ও গতি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে অতীতে কোনো ক্রীড়ামন্ত্রীর বেলায় তা লক্ষ করা যায়নি। দলীয় ও রাজনীতিকরণকেই তাঁরা প্রাধান্য দিয়েছেন। আসিফ মাহমুদ মনেপ্রাণে চাচ্ছেন স্বচ্ছতা, গতি ও উন্নয়ন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে বা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়া অন্য খেলাগুলো যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা না। ক্রীড়া উপদেষ্টা তো সার্চ কমিটি গঠন করে দেন। তারাই যোগ্য ও অভিজ্ঞ সংগঠকদের বাছাই করে অ্যাডহক কমিটি গড়ার সুপারিশ করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রীড়া পরিষদ তাদের সহযোগিতা করবে। চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। এ পর্যন্ত তো বেশ কটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিও গঠন হয়েছে। এর পরও বিতর্ক উঠছে কেন? বিতর্কটা উঠেছে কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপলকে ঘিরে। কয়েক মেয়াদে তিনি আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।
সত্যি বলতে কি, খোখোর মতো বাংলাদেশে আর্চারি খেলার আবির্ভাব ঘটান চপলই। অ্যাডহক কমিটিতে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে রাখার পরই ফুঁসে ওঠে সার্চ কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আর্চারির যে কমিটি আমরা (সার্চ কমিটি) প্রথমে দিয়েছি, তাতে বেশ কিছু রদবদল করা হয়। অথচ কথা ছিল কমিটি প্রকাশের আগে আমাদের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা হবে। তা-ও হয়নি। পরে উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাদের কমিটিটি রাখা হবে বলে জানান। সেটিই হয়েছে।’ হ্যাঁ, চপলের বদলে আর্চারি ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তানভীর আহমেদ। যদিও রানা কখনো চপলের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে ক্ষোভটা যে কোথায় ছিল তা অনেকের কাছে পরিষ্কার।
আর্চারি ঘিরেই সার্চ কমিটি ও ক্রীড়া পরিষদের মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে, এ নিয়ে সংশয় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, রানা শুধু আর্চারি নিয়ে খ্যাপলেন কেন? আরও ফেডারেশনেরও তো অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়েছে। এখানে কাউকে নিয়ে কি বিতর্ক নেই? যদি বলি এ ধরনের উদাহরণ একাধিক দেওয়া যাবে তা কি ভুল হবে? সাদেক হোসেন খোকা যখন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, তখন ক্রীড়া পরিষদের লটারির টিকিট উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। রানারও তো তা মনে থাকার কথা। যদিও কয়েক বস্তা লটারির টিকিট ক্রীড়া পরিষদের ছাদে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এর সঙ্গে কে যে জড়িত ছিলেন তা কারও অজানা নয়। সেই বিতর্কিত সংগঠক কি অ্যাডহক কমিটিতে ঠাঁই পাননি? শুধু ঠাঁই বললে ভুল হবে, তিনি এখন একটি ফেডারেশনের অভিভাবক!
আর্চারি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। অথচ অ্যাডহক কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অনেক বিতর্কিতও রয়েছেন। হকির নতুন কমিটি গঠন হলেও পলাতক সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক সাঈদের বেশ কজন দোসরও নতুন কমিটিতে রয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এরা কীভাবে স্থান পেলেন? কেন জানি সার্চ কমিটিকে এলাকাভিত্তিক বলা হচ্ছে। আসলে বিষয়টি কী? এখানে নাকি একজন প্রভাব বিস্তার করেছেন। তার পরিচিত যারা তারা নাকি বিভিন্ন ফেডারেশনের কমিটিতে রয়েছেন। কমিটিতে না থাকলেও তার সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টার নানা উদ্যোগ ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু আড়ালে যদি বিতর্কিত কর্মকান্ড চলে তাহলে কি ভালো কিছু আশা করা যায়?
ক্রীড়া উপদেষ্টার উচিত হবে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া। যে লোক অতীতে বিতর্কে জড়িয়েছেন, তিনি কীভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন?