আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁ জেলার সাপাহার-নজিপুর আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার স্থানজুড়ে বসেছে আমের হাট। পাখি ডাকা ভোর থেকে দিনব্যাপী চলে কেনাবেচা। সূর্য ওঠার আগে থেকে কৃষকরা ভ্যান, ভটভটি এবং অটোরিকশায় ক্যারেট সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসেন আম। যদিও ঈদের আগেই আমের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে ঈদের পরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন। গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড দাবদাহ ও গরমের কারণে আম পেকে যাওয়ায় প্রায় সব জাতের আম একসঙ্গে বাজারে এসেছে। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমেছে।
এদিকে, প্রশাসন নির্ধারিত ওজন ও আমের গুণগত মান নিয়ে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। কৃষকরা বলছেন, প্রশাসন থেকে কেজিতে আম ক্রয় করতে বললেও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছেন। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় বাজারগুলোতে আমের চাহিদা তেমনটা না থাকায় আমের দাম কম। তাই লোকসানের মুখে রয়েছেন তারা। বর্তমানে বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়া, নাকফজলি, ব্যানানা ম্যাংগো এবং আম্রপালি বিক্রি হলেও তা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে।
সোমবার সকালে নওগাঁর সাপাহারের আমের হাটে প্রতি মণ হিমসাগর ১৪০০-১৬০০ টাকা, ল্যাংড়া ১২০০-১৫০০ টাকা, নাকফজলি ১৩০০-১৮০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৩৫০০-৪২০০টাকা, হাড়িভাঙ্গা ১৫০০-২৫০০ টাকা এবং আম্রপালি ১৮০০-৩৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাপাহারের ওড়নপুর গ্রামের কৃষক আল মামুন বলেন, এ বছর আমের দাম অনেক কম। গত বছর এই বাগানের আম প্রতি মণ বিক্রি করেছি ৪২০০-৪৫০০ টাকা। আর আজ বিক্রি করলাম ২০০০-২৫০০ টাকা মণ। যে দামে আম বিক্রি করলাম তাতে করে খরচ উঠবে না। অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সাপাহার হাটে আম বিক্রি করতে আসা পত্নীতলার কৃষক কোরবান আলী বলেন, অন্যের ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আম্রপালির বাগান করেছি। দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। কী আর করার। আম নিয়ে হাটে এসেছি, তাই ফেরত নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাই একরকম বাধ্য হয়েই বিক্রি করলাম। এটা একটা ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি সিন্ডিকেট।
সাপাহারের কৃষক তছলিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছেন। তবে এটা ঠিক নয়, কারণ এবার আমের ফলন কম সেই সাথে দামও কম। তাই এবার আম চাষীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ বিষয়ে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন তিনি।
চাঁপাইনবাগঞ্জের কানসাট থেকে আসা আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের সাথে আলোচনা করেই ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ নেওয়া হচ্ছে। এর কারণ হলো ক্যারেটের সব আম এক সাইজের হয় না। ছোট-বড় হয়। যার কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ নিয়ে থাকেন।
ঢাকা আসা আম ব্যবসায়ী সিফাতুল্লাহ দাবি করেন, আমের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আম কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন কিন্তু ক্রেতা নেই। ঈদের পর এখন অফিস খুলেছে। ঢাকায় লোকসমাগম বেড়ে গেলে আমের দাম বেড়ে যাবে।
সাপাহার উপজেলা আম আড়তদার সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বছর তুলনামূলক ফলন কম হলেও আমের সাইজ বেশ ভালো। সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী কেজিতে আম ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং কানসাটের ব্যবসায়ীরা ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম ক্রয় করছেন। যার কারণে এ বাজারে আম ক্রয় করতে আসা অন্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। তাই ওজনের বিষয়টি যদি সারা দেশে একই রকম রাখা হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হয়।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে, যা থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ