ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই। যে কোনো মিশনে গেলেই জয়ের উৎসব করার জন্য ওত পেতে থাকেন সমর্থকরা। স্বপ্নভঙ্গও হয়। ফুটবল নিয়ে স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা গত দেড় দশকে হয়নি বললেই চলে। স্বপ্নই তো ছিল না! বহু বছর পর ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখছে। হামজা চৌধুরী লাল-সবুজের জার্সি জড়িয়ে মাঠে নামছেন। তিনিই আশার প্রদীপ হয়ে দেখা দিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। তবে ফুটবল তো আর একজনের খেলা নয়। এই খেলা ১১ জনের। হামজাকে পেয়ে দলের বাকিরাও যেন এক লাফে অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন। শরীরী আর মুখের ভাষায় আছে আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই ভারতে যাত্রা করেছেন জামাল-হামজারা। এ যাত্রা যে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা! দুই যুগেও বেশি সময় আগে ভারতকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। বহু বছর পর সেই ইতিহাস ফিরিয়ে আনার মিশনে গেলেন জামালরা। ভারত জয়ের মিশনে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ৩৮ সদস্যের দল ছোট করে ২৪ জনে নামিয়ে এনেছেন। তবে এখনো ২৩ জনের চূড়ান্ত দল ঠিক করতে পারেননি তিনি। গতকাল ২৪ ফুটবল নিয়েই ভারত জয়ের মিশনে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ঢাকা ছেড়েছেন জামাল-হামজারা। কলকাতা হয়ে পৌঁছাবেন শিলংয়ে। সেখানে বিভান্তা হোটেলে উঠেই শুরু করবেন অনুশীলন। ২৫ মার্চ ভারত ম্যাচের আগে আরও চারটি সেশন অনুশীলন করানোর সুযোগ পাবেন কাবরেরা।
ম্যাচের একদিন আগে ২৩ সদস্যের দল জমা দিতে হবে কোচ কাবরেরাকে। ২৪ জনের মধ্যে বাদ পড়বেন একজন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৩৮ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেন কাবরেরা। সেখান থেকে অনুশীলন শুরুর আগেই বাদ দেওয়া হয় আটজনকে। পরে প্রায় তিন সপ্তাহ অনুশীলন করেন জামালরা। সেখান থেকেও ফাহমেদুল ইসলাম বাদ পড়েন। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ২৭ ফুটবলার। সেখান থেকে তিনজন বাদ পড়লেন। বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন আরিফ হোসেন, পিয়াস আহমেদ ও তাজউদ্দিন। গতকাল ভারত যাত্রার আগে ফুটবলাররা মিডিয়ার সামনে ভালো ফল নিয়ে দেশে ফেরার কথা বলে গেলেন। আগেই কোচ কাবরেরা, অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা তারকা ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী ভারত ম্যাচে জয়ের কথা বলেছেন। গতকাল আরও একবার সেই দৃঢ়তার কথাই জানিয়ে গেলেন তারা। ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম ভারতের মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেললেও সেবার ভারতের মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। দুই দলের শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিই ড্র হয়েছে। ভারত জয় পেয়েছে একটিতে। হামজা চৌধুরীকে নিয়ে শক্তিশালী দল গঠন করেছেন কাবরেরা। এ দলই স্বপ্ন পূরণ করবে! ছেলেদের ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে জয় না থাকলেও নারী জাতীয় দল এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভারতকে হারিয়েছে। টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছেন সাবিনা খাতুনরা। হামজা চৌধুরী বলেছেন, মেয়েদের দেখানো পথেই হাঁটতে চান তারা। বিজয়ের পথে। আগামী ২৫ মার্চের ভারত ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক নবযাত্রা। ম্যাচের ফলাফল যাই হোক, হামজা চৌধুরীর প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে বহুদিন। আর এ ম্যাচে জয় পেলে, তিনি রাতারাতি হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের ফুটবলের মহাতারকা।