হামজা চৌধুরীকে নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনার শেষ নেই। এমন এক ফুটবলারকে নিয়ে আলোচনা হবেই বা না কেন! তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ফুটবল টুর্নামেন্ট এফএ কাপ জয় করেছেন। ইংল্যান্ডের খুবই মর্যাদার ট্রফি কমিউনিটি শিল্ড জয় করেছেন। জয় করেছেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগের ট্রফি ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ। লিস্টার সিটির হয়ে এসব ট্রফি জয় করা হামজা চৌধুরী এবার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতে প্রস্তুত। সব কাগুজি কাজ শেষ। এমনটি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলেও আছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে সামনের ২৫ মার্চই বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়ে যাবে ইংল্যান্ড মাতানো এ ফুটবলারের। বাংলাদেশে তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। শেষ হয়তো হবেও না কখনো। তবে কেবল বাংলাদেশেই নয়, হামজাকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষেই শিলঙয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হামজার উপস্থিতির ইঙ্গিত বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে ভারতকে। এ কারণেই নানা রকমের পরিকল্পনা চলছে। এরই মধ্যে দলে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন ভারতীয় ফুটবল কর্তারা। ভারতের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা সুনীল ছেত্রী। প্রায় দুই দশক ধরেই তিনি দেশটির জার্সিতে খেলছেন। অনেক রেকর্ডের মালিকও তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৯৪ গোল করেছেন। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় আছেন চার নম্বরে। তার ওপরে কেবল রোনালদো (১৩৫), মেসি (১১২) এবং আলি দাইয়ি (১০৮)। গত বছরের জুনে কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিপক্ষে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলেই বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। তবে আট মাস যেতে না যেতেই তার ডাক পড়ল ভারতীয় দলে। দেশটির ফেডারেশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছে, ‘এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং ওই টুর্নামেন্টের যেতে যেসব ম্যাচ খেলতে হবে তা বিবেচনা করে সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অবসর ভেঙে ফিরতে রাজি হন, এরপরই তাকে দলে যুক্ত করা হয়েছে।’ এ খবরে ভারত-বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নানারকমের আলোচনা শুরু হয়। হামজা চৌধুরীকে নিয়ে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সুনীল ছেত্রীকে দলে ফেরানো হয়েছে, এমন চর্চা শুরু হয় বাংলাদেশে। অন্যদিকে ভারতীয় মিডিয়াতেও চলে পাল্টা প্রচারণা। হামজাকে নিয়ে মোটেও ভীত নয় ভারত, এমন আলোচনা চলতে থাকে। সুনীল ছেত্রীকে দলে নেওয়া হোক বা না হোক, হামজাকে নিয়ে ভারত যে বিশেষ পরিকল্পনা করছে তাতে সন্দেহ নেই। হামজা একইসঙ্গে ডিফেন্ডার এবং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে পারেন। তার ব্লকগুলো শিল্পীর কারকার্যের মতোই। ড্রিবলিংয়ে জুড়ি মেলা কঠিন। এমন ফুটবলারকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা তো থাকবেই।
হামজাকে নিয়ে পরিকল্পনা তো বাংলাদেশেরও কম নয়। জামাল ভূঁইয়ারা বর্তমানে অনুশীলন করছেন সৌদি আরবে। এর আগে কয়েক দিন বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় অনুশীলন করেছেন। স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার এখন বড় কাজ, হামজাকে দলে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করা। তিনি নিশ্চয়ই তাই করছেন। ইংল্যান্ডের দল শেফিল্ডের হয়ে খেলছেন হামজা। সেখানে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ম্যাচ রয়েছে তার। এরপরই বাংলাদেশ দলে যোগ দিতে আসবেন হামজা।
ভারত ও বাংলাদেশের ফুটবল অতীত ভারতেরই পক্ষে। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের হিসেবে ভারতকে খুব একটা এগিয়েও রাখা যায় না। ২০১৩ সাল থেকে দুই দল পাঁচবার ফুটবল নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে। এর মধ্যে একবার ভারত জয় পেলেও বাকি চারবারই প্রতিপক্ষকে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০১৯ ও ২০২১ সালের ম্যাচ দুটোতে বাংলাদেশ জয়ের খুব কাছাকাছিই ছিল। সুতরাং সামনের ম্যাচটা ভারতের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্যও নিশ্চয়ই। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ বর্তমানে বেশিই অনুভব করছেন জামাল ভূঁইয়ারা।