আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম চললেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় এখনো রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ : সফল নির্বাচন আয়োজনে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে নিজেদের মধ্যে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি।
নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন জাতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।’
তাঁর মতে, এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে এখনো সময় আছে এবং সব পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং মুক্ত গণমাধ্যমই অবাধ নির্বাচনের রক্ষাকবচ।’
সংবিধান সংশোধন নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন জাতীয় সংসদেই হওয়া উচিত। এর বাইরে কোনো বৈধ পন্থা থাকলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আলোচনা চলছে। এমন কোনো উদাহরণ তৈরি করা উচিত নয়, যেটি ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে, তার একটি পরীক্ষামূলক মডেল ছিল ডাকসু নির্বাচন। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আট লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিন সরকারের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই সরকারকে কাজ শুরু করতে হবে। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী পরিবেশ, পর্যবেক্ষণ সমন্বয় কমিটি গঠন করা উচিত। কোথাও কোনো দলের সঙ্গে অন্য দলের সংঘাত হলে সেই প্রশ্ন এখন থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং হওয়া দরকার। আসন্ন নির্বাচনে সরকার গঠন করা সম্ভাব্য দলের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য এখনই কাজ করতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটালিস্ট হিসেবে বিবেচনা করছি। যেটা নিয়ে নাগরিক পরিষদে এবং সিভিল সোসাইটিতে যারা নীতিনির্ধারণ করছেন তাঁদের এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা পুলিশ সংস্কার কমিশন করার কথা বলেছিলাম, যাতে তাদের পোস্টিং-প্রমোশনের ক্ষেত্রে একটা স্বতন্ত্র বোর্ড কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রি-ইলেকশন চ্যালেঞ্জের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রোল অব এজেন্সি এবং আর্মি। এটা কিন্তু এখন পর্যন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা এখনো দেখছি, বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি বিগত সময় যেভাবে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে, এখনো করছে। আমরা এটাকে কতটা ডিসঅ্যাসোসিয়েট করতে পারি, এটা আমাদের জন্য কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন জরুরি। অনেকেই মনে করেন জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো—আমরাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে এখন বোঝায়—ক্ষমতা থাকলে আপনি টিকে থাকবেন, না থাকলে টিকবেন না। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের বড় ভূমিকা রয়েছে।’
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ প্রমুখ।