ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কমিশন এই অনুসন্ধানে নেমেছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অবৈধ সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্ত্রীসহ মাসুদ আলমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মাসুদ আলম সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জাতীয় যুব কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি। শরীয়তপুত জেলার গোসাইরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাসুদের জন্ম। ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড ছাড়াও মাসুদ আলমের একাধিক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, সাবরেজিস্ট্রার অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে সম্পদ ও অর্থপাচারের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাসুদ আলমের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়ও কী কী সম্পদ রয়েছে তা জানতে চেয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুসারে তথ্যগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। তথ্যগুলো পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।
যা আছে দুদকের অভিযোগে: আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের সঙ্গে যোগসাজশে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন মাসুদ আলম বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এসব সম্পদ অর্জন করেন। একটি প্রভাবশালী মহল মাসুদকে ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে সর্বোচ্চ অনিয়ম করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ২৯৭ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্পের দরপত্র সাজানো হয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাসুদ আলমের ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের জন্য।
শেখ হাসিনার পতনের পর জুলাই চেতনার সরকারের আমলেও সেই মাসুদের প্রতিষ্ঠানকেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডকে টেন্ডারের শর্তাবলির সরাসরি লঙ্ঘন করে কাজটি দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার ৮০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের।
অভিযোগে আরো বলা হয়, মাসুদ আলমের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দুই সাবেক সচিবের ব্যাবসায়িক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই স্বার্থান্বেষী চক্র, যারা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ব্যাবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করতে মাসুদকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে।
এ ছাড়া ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, দরপত্রে ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে প্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন যোগ করে প্রথম হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড।
স্ত্রীসহ দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা: এদিকে গত বুধবার মাসুদ আলম ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মাসুদ আলম ও তার স্ত্রীর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। মাসুদ আলম ও আয়েশা সিদ্দিকা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করে, তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছে। বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্য ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদলত ওই দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে মাসুদ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে মন্তব্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সৌজন্যে: কালেরকণ্ঠ