ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় গণ অভ্যুত্থানে। গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ছবি নাড়িয়ে দেয় কলকাতার সুধীমহল ও ছাত্রসমাজকে। ৫ আগস্ট দুপুরে অবসান হয় স্বৈরাচারী শাসনের। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার বিমান ঢাকার আকাশ ছাড়তে গুঞ্জন ওঠে তিনি কোথায় যাচ্ছেন? ভারত না ইউরোপের কোনো শহরে? ওই দিন সন্ধ্যায় তার বিমান নামে দিল্লিতে। সেই থেকে অজ্ঞাত স্থানে আছেন হাসিনা। দলনেত্রীর পরপরই তার ঘনিষ্ঠ অনেক নেতা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে অবস্থান নিয়ে কলকাতাবাসীর কৌতূহলের সীমা নেই। বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, তাদের বেশির ভাগই কলকাতা শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছেন। কেউ রয়েছেন দিল্লিতে। কেউ আছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত-মধ্যমগ্রামে। কেউ আছেন রাজারহাট বা নিউটাউনে। কেউ আছেন বর্ধমানে। অনেকে বলছেন তারা আদৌ কলকাতাতে নেই। সূত্রমতে, ওবায়দুল কাদের আছেন রাজারহাট-নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে। এই অভিজাত আবাসনেই রয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল। কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় আছেন তানভীর হাসান ও নিজাম উদ্দিন হাজারী। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে রয়েছেন অসীম কুমার উকিল। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকায় আছেন বাহাউদ্দিন নাছিম। পার্ক সার্কাস এলাকায় আছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। দক্ষিণ কলকাতা যাদবপুর এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন ফেরদৌস আহমেদ। বর্ধমান জেলার কাটোয়ার নবাবহাটে রয়েছেন শাহরিয়ার আলমের মতো নেতারা। কিন্তু ওই সব ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে ভারতে তাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার একাংশ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখেও উঠে আসে হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে অবস্থানের প্রসঙ্গটি। মমতার মতো কলকাতার অনেক সাধারণ মানুষও হাসিনাসহ বাংলাদেশিদের ভারতে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিমত, সত্যিই যদি কলকাতায় বা ভারতে আওয়ামী লীগের নেতারা অবস্থান করেন তবে তাদের সেদেশে পুশব্যাক করা উচিত। অভিজিৎ দে নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লিতে জামাই আদর করে রেখে দেওয়া হয়েছে। তার প্রশ্ন, যেখানে বাংলাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি কিংবা রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার কেন দিল্লিতে হাসিনার মতো নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে? কেন রাজারহাট নিউটাউনের মতো হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে থাকা সেসব নেতাকে খোঁজে বের করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে না?’