নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার দাদার খনন করা পুকুরটি ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্মৃতিবহন করে চলছে। বিকালে পুকুর পাড়ে আজও বসে নবীন-প্রবীণের আড্ডা। ওই আড্ডায় অনেকেই রোকেয়ার পূর্বপুরুষের স্মৃতিচারণা করেন। রোকেয়ার পিতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবেরের বাবা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবুল সবুর সাবের এ পুকুরটি খনন করেছিলেন।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানালেন, পুকুরটি রোকেয়ার দাদা ৩০০ বছর আগে খনন করেছিলেন। পুকুরের পাড় মিলে মোট জমির পরিমাণ চার একরের মতো। একসময় পুকুরের চারপাশে শানবাঁধানো ঘাট ছিল। লোকজনের বসার জন্য বেঞ্চ ছিল। এসবের এখন কিছুই নেই। একসময় পুকুরে শত শত কচ্ছপ ছিল।
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোতাহার হোসেন সুফির লেখা ‘বেগম রোকেয়া : জীবন ও সাহিত্য’ বইয়ের বংশ পরিচয় অংশে লিখেছেন- “বেগম রোকেয়ার পূর্বপুরুষ বাবর আলী আবুল বাবুর সাবের তিব্রেজী জন্মভূমি পরিত্যাগের পর সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমে ভারতের বিহার প্রদেশের কাটপ মংপুর নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীকালে ৯৯০ বঙ্গাব্দের, ১৫৮৩ সালের কোনো একসময়ে তিনি পায়রাবন্দে আগমন করেন। কুর্সীনামায় এর উল্লেখ আছে। তদনুযায়ী ষোড়শ শতকের শেষার্ধ্বে পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার এই ঊর্ধ্বতন পুরুষের আগমন ঘটেছিল। কিন্তু কীভাবে বেগম রোকেয়ার পূর্বপুরুষগণ পায়রাবন্দের জমিদারির মালিকানা লাভ করেছিলেন, সেই ইতিহাস সম্পূর্ণ অজানা। পায়রাবন্দ পূর্বে তাজহাট জমিদারির অন্তর্গত ছিল। রঙ্গপুর জেলার মুসলমান জমিদারদের মধ্যে মহিপুরের পরেই পায়রাবন্দের স্থান। বেগম রোকেয়ার পিতা ছিলেন পায়রাবন্দের জমিদারির সর্বশেষ উত্তরাধিকারী। বেগম রোকেয়ার শৈশবেও এই জমিদারির অবস্থা ছিল ভালো। সাড়ে তিনশ বিঘা লাখেরাজ জমির মাঝখানে ছিল পায়রাবন্দের জমিদারবাড়ি। বেগম রোকেয়ার কথায়, ‘আমাদের অবস্থা সচ্ছল ছিল-আমরা প্রায় সুখে খাইয়া পরিয়া গা-ভরা গহনায় সাজিয়া থাকিতাম। আমাদের এ অরণ্যবেষ্টিত বাড়ির তুলনা কোথায়? সাড়ে তিনশত বিঘা লাখেরাজ জমির মাঝখানে কেবল আমাদের এই সুবৃহৎ বাটী।’ একদা যা ছিল সুবৃহৎ জমিদারবাড়ি বর্তমানে তা ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পায়রাবন্দের জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষটুকু অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ধ্বংসাবশেষের পাশেই আছে এক সুবৃহৎ দিঘি। এই দিঘিটি সেকালে পায়রাবন্দের জমিদারবাড়ির শোভাবর্ধন করত। বেগম রোকেয়ার পিতার আমলেই বর্তমান শতকের সূচনায় পায়রাবন্দের জমিদারি শেষ অবস্থায় উপনীত হয় এবং তাঁরই জীবদ্দশায় জমিদারি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।”