রংপুর অঞ্চলে বন্যার সময় বানের জলে নদীর পাড়ের মানুষকে শুধু কাঁদায় না, জেগে ওঠা চরে ফসল ফলিয়ে কৃষদের বাঁচায়ও। বন্যায় পলি পড়ে নদীতে জেগে ওঠা চর এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। তাতে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। এখন চরের যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ। এসব জমিতে আবাদ হচ্ছে আলু, ভুট্টা, গম, বাদাম, তিল, তিসি, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, করলা, সরিষা, সূর্যমুখী, গাজরসহ বিভিন্ন শাকসবজি। নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ায় সেগুলো কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। চরের ফসলে কৃষকের পরিবারে ফিরে এসেছে স্বস্তি। এসেছে অর্থিক সচ্ছলতা। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নদীতে জেগে ওঠা ৭৩৫টি চরে প্রতি মৌসুমে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এসব ফসলে কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে এসেছে নতুন গতি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় প্রবহমান তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘট, চারালকাটাসহ অন্যান্য নদনদীতে ৭৩৫টি চর রয়েছে। এসব চরের জমির পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮১ হাজার ৩০১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে মোট ১২০০ কোটি টাকার ফসল ঘরে তুলছেন চরের কৃষকরা। কৃষি অফিসের তথ্য মতে এসব চরে আলু প্রতি হেক্টরে ২৪-২৫ টন, ভুট্টা ১২-১৩ টন, গম ৩ থেকে সাড়ে ৩ টন, শাকসবজি প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ২০ টন উৎপাদন হচ্ছে।
গঙ্গচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের হাদি মিয়া, আবুল কালাম মতলুব রহমান মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে বলে জানা যায়, বন্যার সময় তিস্তা দুই কূল ছাপিয়ে প্লাবিত করলেও শুকনো মৌসুমে ফসলের আবাদ করে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আসে তাদের। চরে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে বাড়তি টাকায় অনেকে অনেক প্রয়োজন মিটাচ্ছেন। চরের অধিকাংশ মানুষ এখন বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে দারিদ্র্য দূর করছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, চরের জমিতে বেশি বেশি করে ফসল ফলাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ চরের কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের চরে ৮০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা রেখেছেন।