ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। কেউ বাস, কেউ লঞ্চ, কেউবা ট্রেনে বাড়ি ফিরছে। কিন্তু এ আনন্দ অনেকের জন্য নিরানন্দ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সড়কের বাঁকে বাঁকে ফাঁদ পেতে বসে থাকে দুর্ঘটনা। আর এ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঝরে পড়ছে বহু তাজা প্রাণ। ঈদের সময় এ দুর্ঘটনা আরও বৃদ্ধি পায়। এসব দুর্ঘটনায় হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে পঙ্গুত্ববরণ করা অসংখ্য মানুষ। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় প্রতিনিয়ত ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। সারা দেশে ২৮৩টি অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলো (ব্ল্যাক স্পট) চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতি নিয়ন্ত্রণসহ দুর্ঘটনাপ্রবণ এসব এলাকায় দেখেশুনে সতর্কতার সঙ্গে যানবাহন চালাতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বেপরোয়া চালক ও পথচারীদের আইন না মানার প্রবণতা। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, সারা দেশে অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোয় (ব্ল্যাক স্পট) হাইওয়ে পুলিশের টহল ডিউটি থাকে। এ ছাড়া গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে স্পিডগান ব্যবহার করা হচ্ছে। ৪ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, ৮২০টি টহল দল, ৩০০টির অধিক চেকপোস্টের মাধ্যমে, মোটরসাইকেল পেট্রোলিং, ড্রোন মনিটরিং ও ওয়াচ টাওয়ারের সহযোগে মহাসড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হবে। চালকদের ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি না চালানো, ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালাতেও অনুরোধ করেন তিনি।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান জানান, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় গতির কারণে। তাই দেশের সড়ক পরিস্থিতির কথা ভেবে নিরাপদ গতি নির্ধারণ করা উচিত। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে সব ধরনের যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে উঠে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা মহাসড়কে উঠে পড়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে মানসম্মত গণপরিবহনের ব্যাপক অভাব রয়েছে। সে কারণে সড়ক বা মহাসড়কে নিরাপদে চলাচলের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
দুর্ঘটনাপ্রবণ ২৮৩টি স্পট হচ্ছে- হবিগঞ্জে পাঁচটি (রতনপুর, অলিউর, জগদিশপুর, বিরামচর ও রশিদপটুর); মৌলভীবাজারে ৮টি (তাজপুর, সদরঘাট, গোয়ালাবাজার, আন্দিউরা, বড়চর, কান্দিগাঁও, লামুয়া ও কামাইছড়া); সিলেটে পাঁচটি (চিকনাগুল, বাঘের বাজার, দরবস্ত বাজার, দয়ামীর ও শ্রীপুর); সুনামগঞ্জে দুটি (জানিগাঁও ও লামাবাজী); বাগেরহাটে পাঁচটি (ফলতিতা, কাঁঠালিতলা, লখপুর, জাবুয়া ও পাগলা শ্যামনগর); মাগুরায় একটি (ইছাখাদা); যশোরে পাঁচটি (মুলঘর, দামোদার, রাজহাট, মহাকাল ও চুড়ামনকাঠি); কুষ্টিয়ায় চারটি (বটতৈল, নওদা গোবিন্দপুর, বিত্তিপাড়া ও বহলবাড়িয়া); খুলনায় দুটি (বড়তিয়া ও গুটুদিয়া); ঝিনাইদহে একটি (ভাটোই); কুমিল্লায় ৩৬টি (গৌরিপুর, রায়পুর, শহীদনগর, হাসানপুর, আমিরাবাদ, জিংলাতলী, বারপাড়া, রাবেয়া পাম্প, আমনগন্ডা, সৈয়দপুর, ধর্মপুর, বাবুর্চি বাজার, কালিকাপুর বাজার, হাড়ি সদ্দার, লালবাগ, মাধাইয়া, তীরচর, কুটুম্বপুর, নুরিতলা, দোতলা, ইলিয়টগঞ্জ, কালাকচুয়া, নিমসার বাজার, পদুয়া বাজার, কোরপাই, নাজিরা বাজার, রামপুর, কাবিলা, মাটিয়ারা, রাহাত ফিলিং স্টেশন, সুয়াগাজী, ঝাকুর ঝুলি, আমতলী, চাষাপাড়া, সংচাইল ও মন্ত্রীপুল); ফেনীতে ১৮টি (লালপোল, বিমিক মোড়, মিলোনিয়া, স্টারলাইন সিএনজি পাম্প, ফতেহপুর, দেবীপুর, মহরীগঞ্জ, কাজিলপুর, খাইয়ারা, লেমুয়া, কসকা, বারইয়ার হাট বাজার, সোনা পাহাড়, ওয়াহেদপুর, ছোট কমলদহ, বড় কমলদহ, বড়তাকিয়া ও ঠাকুরদীঘি); চট্টগ্রামে ২১টি (ছোট কুমিরা, বড় দারোগার হাট, জোড়ামতল, বাঁশবাড়িয়া, ছোট দারোগার হাট, ভাটিয়ারী, শীতলপুর, শুকলাল হাট, বারবকুণ্ড, মাদাম বিবির হাট, মগপুকুর, সোনাইছড়ি, ঘোড়ামারা, ফারহাদাবাদ, ইছাপুর, মনসা চৌমহনী, শান্তির হাট, জুলুরদীঘি পাড়, ভাইয়ার দীঘি, পদুয়া বাজার ও হারবাং এলাকা); নোয়াখালীতে দুটি (মান্দারী ও চরচামিতা); ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুটি (বীরপাশা ও কুট্টাপাড়া); কক্সবাজারে ৮টি (বানিয়ার ছড়া, বরইতলী, খামিয়াখালী, মোদাকচ্ছপিয়া, পানির ছড়া, রাবার বাগান, বালুখালী ও উখিয়াবাজার); সিরাজগঞ্জে ৭টি (হাটিকুমরুল গোলচত্বর, পাচলিয়া বাজার, দবিরগঞ্জ বাজার, সাহেবগঞ্জ, ভূইয়াগাঁতি, নাইমুড়ি বাজার ও বোয়ালিয়া বাজার); নাটোরে ১১টি (কদিমচিলান, গড়মাটি, কালিকাপুর, কাছিকাটা, আগ্রান, রাজ্জাক মোড়, চৌগ্রাম, আহমেদপুর বাজার, হয়বতপুর বাজার, দত্তপাড়া বাজার ও একডালা); রাজশাহীতে পাঁচটি (বানেশ্বর বাজার, কাঁঠালবাড়িয়া মোড়, সেনবাগ, বিড়ালদহ মাজার ও জাগিরপাড়া); পাবনায় তিনটি (জয়নগর, সরাইকান্দি ও দাশুড়িয়া মোড়); বগুড়ায় চারটি (মাঝিরা, শেরুয়া বটতলা, বি-ব্লক ও দশমাইল); গাইবান্ধায় ৮টি (কালিতলা, কোমরপুর, গোকুল, চণ্ডিহারা, ফাসিতলা, পাকুরতলা, চাপরিগঞ্জ ও আড়িয়াবাজার); মাদারীপুরে চারটি (পাচ্চর গোলচত্বর, মালিগ্রাম, বন্দরখোলা ও পুলিয়া বাজার); ফরিদপুরে ১৬টি (সদরদী, মাঝিগাতী, হামিরদী, মশাউজান, কৈডুবি, বগাইল, রিশাতলা, নওয়াপাড়া, কানাইপুর, মল্লিকপুর, গঙ্গাবর্দ্দি, বাগাট, নিহাজ জুট মিল, গজারিয়া, দিগনগর ও মানিকনগর); রাজবাড়ীতে চারটি (বাগমারা, পাইকারমোড়, লক্ষ্মীপুর ও ডুমুরদী); বরিশালে ছয়টি (কালিবাড়ী, বাটাজোড়, বার্থী, আটিপাড়া, বামরাইল ও মাহিলারা); গোপালগঞ্জে পাঁচটি (নিমতলা, মান্দারপাড়া, তিলছড়া, ঘোনাপাড়া ও ফুকরা); ময়মনসিংহে ১৩টি (ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, মাস্টারবাড়ী, হাজিরবাড়ার, নিশিন্দা, সিড-স্টোর, আমতলী বাজার, জামিদিয়া, মল্লিকবাড়ী, চামটাবাজার, সাভার, আমলীতলা বাজার, মুসল্লি ও ঝালুয়া); নেত্রকোনায় তিনটি (জালশুকা, ইছবপুর ও খিচা); টাঙ্গাইলে ১৩টি (ভাতকুড়া, রসুলপুর, আশিকপুর বাইপাস, ইছাপুর, দরুন, করটিয়া বাইপাস, নাটিয়াপাড়া, ডুবাইল, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ গেট, করাতিপাড়া, সূত্রাপুর, শুভল্যা ও কদিমধল্লা); গাজীপুরে ৯টি (সফিপুর বাজার, শ্রীফলতলী, মৌচাক, গোয়ালবাথান, বোর্ডঘর, এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার, জৈনাবাজার ও ভবানীপুর); ঢাকায় ১২টি (সালেহপুর ব্রিজ, গেন্ডা, চুলিভিটা, উলাইল, বিশমাইল, হেমায়েতপুর, নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড, ইসলামপুর, সুতিপাড়া, ভাটবাউর, কালামপুর বাজার ও চরখণ্ড); মানিকগঞ্জে ৭টি (তরাব্রিজ, মহাদেবপুর, পুখুরিয়া, জোকা, আড়পাড়া, বানিয়াজুড়ি ও পাচুরিয়া); নারায়ণগঞ্জে ১৪টি (বরাব বাসস্ট্যান্ড, যাত্রামুড়া ব্রিজ, তারাবো বিশ্বরোড, বরপা, ভুলতা মোড়, ছনপাড়া, মদনপুর, দড়িকান্দি, কেওঢালা, পিরোজপুর ইউটার্ন, কাঁচপুর মোড়, গোলাকান্দাইল, মালিবাগ ও অলিম্পিক ইউটার্ন); নরসিংদীতে দুটি (কামারচড় ও সৈয়দনগর); কিশোরগঞ্জে চারটি (মাহমুদাবাদ এলাকা, মনোহরপুর, পাতিলধোয়া ও নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড) এবং মুন্সিগঞ্জে ১০টি (বালুয়াকান্দি, জামালদি, পাখিরমোড়, পুরান বাউশিয়া, বক্তারকান্দি, বটতলা, আবদুল্লাহপুর, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে, ধলেশ্বরী ব্রিজ ও কুচিয়া মোড়)।