আবাসিকের লাইনের গ্যাস কিংবা সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। ঢাকা ও তার আশপাশে একের পর এক গ্যাসের লিকেজ থেকে দুর্ঘটনায় পুড়ছে তাজা প্রাণ। অগ্নিদুর্ঘটনায় ঝলসে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন আহতরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের তুলনায় গ্যাসের লিকেজ থেকে অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা কম। কারণ সিলিন্ডারের ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। অবৈধ গ্যাসের লাইনের কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার গত দুই বছরে দেশে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে। এ সময় মাটির নিচে যে গ্যাসের পাইপলাইন আছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত না। এখানে অনেক লিকেজ হতেই পারে। কারণ এই লাইনগুলো ৫০ বছরের পুরোনো। লিকেজ দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাসের গ্রাহকদের ঘরে ব্র্যান্ডের ভালোমানের গ্যাস সিলিন্ডারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উচিত বলে তারা মনে করেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৭০৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ৪৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। আর গ্যাস সরবরাহের লাইন লিকেজ থেকে ৪৬৫টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এখন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় দোকানে যত্রতত্র এলপি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়। যদি সঠিকভাবে রাখা যায় তাহলে একটি গ্যাস সিলিন্ডার দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন করা হচ্ছে না। আবার প্রতি ১০ বছর পর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও এমনটি মানা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকানন এলাকায় রান্নাঘরের গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন ধরে নাসরিন আক্তার (৩২) নামে এক নারীর গত মঙ্গলবার মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে আগুনে দগ্ধ হয়েছিল তার তিন বছরের শিশু সন্তান আবদুল্লাহ আল তায়িফও। শিশুটি এখন চিকিৎসাধীন। গত ১০ মার্চ রাতে রান্নাঘরে চুলা জ্বালাতে যান নাসরিন। এ সময় গ্যাস লাইনের লিকজের কারণে জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে যায়। এ ছাড়া চাঁদপুর পৌরশহরে গ্যাসের লিকেজ থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরণে একই পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। গত ৯ মার্চ সাহরি করতে উঠে পরিবারটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগে লিকেজ বেশি হয়। আর রান্নাঘরে ভেন্টিলেশনের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় কোনো স্থানে বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে কোনো গ্যাস লিকেজ থাকলে সেটি তখন জমাটবদ্ধ গ্যাসে পরিণত হয়। তখন যেকোনো স্পার্ক বা ম্যাচের কাঠি জ্বালানো হলেই তা বিস্ফোরকে পরিণত হয়। তবে সহজেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় না। আবার সিলিন্ডারের একটি মেয়াদ থাকে। যা এর গায়ে লেখা থাকে। আর এটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তর এগুলো পরীক্ষা করতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সিলিন্ডারের মান কেমন তা যাচাই করা যায়। এজন্য প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর এই সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা করা উচিত। আবার সিলিন্ডারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন- হোসপাইপ, রেগুলেটর, বালব এগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এগুলোর মান পরীক্ষা করা উচিত। মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানের এবং কমদামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে আগ্রহী। সেখানেই তারা ভুল করেন। এ ক্ষেত্রে তারা জীবনের সঙ্গে সমঝোতা করেন। ব্যবহারকারীকে লিকেজ দুর্ঘটনা এড়াতে ব্র্যান্ডের ভালোমানের গ্যাস সিলিন্ডারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উচিত। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগুন জ্বালিয়ে কোনো স্থানে গ্যাসের লিকেজ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা ঠিক না। এ ক্ষেত্রে কোনো স্থানে সন্দেহ হলে সাবান পানি দিয়ে পরীক্ষা করে এতে বুদবুদ হচ্ছে কি না দেখা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্থানে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। গ্যাস লিকেজ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে গ্যাস ডিকেকটর ব্যবহার করা যেতে পারে। রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ঠিক রাখতে হবে।