পাঁচ দিনের প্রথম দুই দিন ঢিমেতালে চললেও তৃতীয় দিন থেকে ক্রমে মেলায় লোকসমাগম বাড়ছে। গতকাল ষষ্ঠ দিনেও সে ধারাবাহিকতা ছিল। প্রতি মেলাতেই প্রকাশকরা শুক্রবারসহ ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকেন। এবারও ব্যতিক্রম নয়। আজ মেলার প্রথম শুক্রবার। প্রকাশকদের আকাক্সিক্ষত দিন। পাঠকের ঢল নামার আশা তাঁদের। রোদেলা প্রকাশনীর কর্ণধার রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ছুটির দিনের জন্য আমরা সব প্রকাশক অপেক্ষায় থাকি। আগামীকাল (আজ) মেলার প্রথম শুক্রবার। আশা করছি পাঠকের ঢল নামবে। প্রকাশকরা উপকৃত হবেন।’ ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি আসে, এতে প্রকাশকরা কতটা লাভবান হবেন- এমন প্রশ্নে এ প্রকাশক বলেন, ‘ঘুরতে এলেও অনেকে বই কেনেন। দর্শনার্থী বাড়লে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বেই। আগে মানুষের আসার অভ্যাস তৈরি হোক। তবে অব্যবস্থাপনা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা দূর না করলে এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার না হলে মেলার প্রতি পাঠকের আগ্রহ কমে যাবে।’ এতে প্রকাশক ও লেখকরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও মনে করেন রিয়াজ আহমেদ। গতকাল পাঁচ দিনের তুলনায় বেশি বিক্রি হয়েছে জানিয়ে ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমাদের প্যাভিলিয়নের বিক্রি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সব বয়সি ও রুচির পাঠকের কথা চিন্তা করে আমরা ৩ শতাধিক বই প্রকাশ করেছি। উচ্চমার্গীয় পাঠকের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের পাঠকের বইও আমরা রেখেছি। ফলে আমাদের প্যাভিলিয়নে ভিড় লেগেই থাকে আর বই না কিনে কেউই ফেরত যায় না।’ এবারের মেলায় এসেছে জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের তিনটি বই। বইগুলো হলো অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘শঙ্খচূড়ের দ্বিতীয় খ ’ ও বেলজিয়ামের আমন্ত্রণে ইউরোপের ১০টি দেশে ভ্রমণ নিয়ে ভ্রমণবিষয়ক বই ‘যেতে যেতে তোমাকে কুড়াই’ এবং অন্যধারা থেকে প্রকাশ হয়েছে উপন্যাস ‘তুমি সন্ধ্যা অলকানন্দা’। অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে নিজের বইয়ের ওপর অটোগ্রাফ দেওয়া অবস্থায় সাদাত হোসাইন বলেন, ‘আজই মেলায় প্রথম এলাম। আমি কখনো মেলা ঘুরে দেখতে পারি না। কর্মমুখর দিনে সাধারণত ভিড় কম থাকে। তবে আমি তিন ঘণ্টা যাবৎ অটোগ্রাফ দিচ্ছি। এতে বোঝা যায় মেলা ও বই নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমার সব বই-ই মোটামুটি ভালো যাচ্ছে। রকমারিতে আমার সব বই এক দুই তিন নম্বরে আছে।’
ছুটির দিনে বিকাল ৩টার পরিবর্তে বেলা ১১টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচন করা হয় বলে প্রকাশকরা একটু বেশি সময় পেয়ে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কারণে কাল শনিবার ও ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা ১১টার পরিবর্তে তিন ঘণ্টা পর ২টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচন করা হবে-বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেশ কয়েকজন প্রকাশক জানান, এতে তাঁরা তিন ঘণ্টা করে দুই দিনে ছয় ঘণ্টার বিক্রি থেকে বঞ্চিত হবেন। এদিকে, সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত রাস্তায় রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বারোয়ারি পণ্যের দোকানগুলোর কারণে একুশের শানিত চেতনায় উজ্জীবিত বইমেলার পরিবেশের সৌন্দর্যের হানি ঘটার পাশাপাশি মেলার পরিবেশও অগোছালো করে তুলেছে। এ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বারোয়ারি পণ্যের দোকানগুলোর কারণে মেলার পরিবেশই শুধু নষ্ট হচ্ছে না, প্রকাশকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে বাংলা একাডেমি। ছয় দিনেও মেলার পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন ও অগোছালো, নিরাপত্তাব্যবস্থাও ঢিলেঢালা এবং বারোয়ারি পণ্যের দোকানগুলোর কারণে একুশের চেতনার বইমেলার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে-এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলা একাডেমির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও কেউই রিসিভ করেননি।
নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতকাল অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই এসেছে ৮০টি। গল্পের ১১টি, উপন্যাস ১৩টি, প্রবন্ধ ২টি, কাব্যগ্রন্থ ২২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৪টি, রচনাবলি ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ১টি, ইতিহাস ৪টি, চিকিৎসা ১টি, ভাষা ২টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি, সায়েন্সফিকশন ১টি ও অন্যান্য ৮টি। আর ছয় দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ২৭০টি।