মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানা থেকে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শ্রীনগর থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক এ মামলা করেন। এর আগে শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলামকে শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীনগর ধাইসার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একটি মারামারির ঘটনায় আদালতের নির্দেশে গত ১৯ নভেম্বর তারিকুলের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
তারিকুলকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রায় দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী থানায় ছুটে আসেন। এ সময় তারা তারিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ কাইয়ূম উদ্দিন চৌধুরীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং বিভিন্ন রকম স্লোগান দেয়। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে তারা থানার সেকেন্ড অফিসারের কক্ষ ভাঙচুর করে এবং পুলিশকে মারধর করে জিয়ার সৈনিক স্লোগান দিয়ে তারিকুলকে থানা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গতকাল শ্রীনগর থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা জেমস, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মাসুদ রানা, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম শুভ, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ইমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব এমদাদুল ইসলাম রজিন, বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন মিলন, জহিরুল ইসলাম মামুনসহ এজাহারে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৬০-১৭০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এর আগে থানা থেকে এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামকে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে এবং যথাযথ বিচারের দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা এলাকায় অবস্থান নিয়ে ব্লকেড ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এতে মহাসড়কের এক কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা দেয়। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাইয়ূম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা থানায় এসে স্লোগান দেওয়া শুরু করে। এ সময় থানায় উপস্থিত মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তারিকুল মামলার আসামি তাই তাকে কোনোভাবেই ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। পরে তারা থানায় ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের মারধর করে আসামি তারিকুলকে ছিনিয়ে নেয়। তারিকুলসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ অন্যদিকে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান গতকাল বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘কোনো ব্যক্তি দলীয় পরিচয়ে কোনো অপকর্ম করলে তার দায়ভার শ্রীনগর উপজেলা বিএনপি বহন করবে না।’
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ ক্লোজড : মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরীকে ক্লোজড করা হয়েছে।
থানার গারদ থেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে ছিনতাই হওয়ার অভিযোগে তাকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে আনা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপারের আদেশে তাকে ক্লোজড করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিনতাই হওয়ার অপরাধেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।